৯শ মানুষের মরদেহ সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যত দিনগুলোতে সম্ভাব্য আরও বহু মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে কাটছে হাইতিবাসীর দিন। হারিকেনের পর বেশ কিছু মানুষের কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন ইতোমধ্যেই। ফসল আর ফল নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা তৈরী হয়েছে খাদ্যঘাটতির। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে মৃত্যর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী সরেজমিন পরিদর্শনে দেখেছেন, সেতুসহ, সাধারণ রাস্তা ঝড়ে, মধ্যপথে গাছ পড়ে ভীষণরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেইসঙ্গে দুর্গম হয়ে উঠেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে বানের পানি, দূষিত করে তুলেছে পানীয় জলের যতো আধার। এ ধরনের জলোচ্ছ্বাসের পর মহামারী হয়ে পানিবাহিত যে রোগগুলো দেখা দেয়, ওগুলোর জন্য বেশ অনুকূল পরিবেশ ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে।ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আনসে ডি হেইনআউট নামের এক শহরে কলেরায় এরইমধ্যে ৭জন মারা গেছে। আর দক্ষিণ উপকূলে ১৭ জরেন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন পার্টনার্স ইন হেলথের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হাইতিতে কলেরা সংক্রমণ এ ধাক্কায় বহুগুণে প্রকট হয়ে উঠতে পারে। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১২ সালের হারিকেন স্যান্ডির পর হাইতিতে কলেরার যে প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তা আজ অব্দি বজায় আছে। এক্ষেত্রে নতুন করে ম্যাথিউর আক্রমণে রোগের সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে।এদিকে হাইতির সিভিল প্রটেকশন অথরিটি-র দেওয়া তথ্য মতে, এ মুহূর্তে দেশটির প্রায় সাড়ে ৩ লাখ আর্ত মানুষের সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন, যাদের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষকে প্রায় ২শ’ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।হাইতির দুযোর্গবিধ্বস্ত এলাকার কর্তাব্যক্তিরা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাদের এ আশঙ্কার কথা বর্ণনা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, রাস্তাঘাট, সেতু ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় আর্তদের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।ওয়াশিংটনে অবস্থিত হাইতি দূতাবাসের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান অ্যারিয়েল ডোমিনিক ইতোমধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে জানিয়েছেন, রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স, পেটি গোভ এলাকার নদীর যে সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে, ওই সেতুটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফল হবে ভয়াবহ। এতে করে আর্তদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সমস্যাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে যে ব্যাপারটি, তা হলো, হাইতির এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর মাটি সবচেয়ে বেশি ফসল ফলাতো এবং এসব ফসল, ফসলী মাঠসহ ধ্বংস হয়ে গেছে।ডোমিনিক জানান, ইতোমধ্যে সরকারি উদ্যোগে যোগাযোগব্যবস্থাকে কিছুটা হলেও চলনক্ষম করে তুলতে অবিরত খেটে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী।ডমিনিকো ওসনির একজন বাসিন্দা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, দুই দিন ধরে পায়ে হেঁটে প্রতিবেশীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বলেন, ‘এখানকার দুর্গতদের সবারই ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, মাথার ওপর থেকে হারিয়ে গেছে ছাদ। আমার সব হারিয়ে গেছে, এমনকী জন্মসনদটা পর্যন্ত।’চান্তালের ডেপুটি মেয়র মার্ক নোয়েল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, যার ওপর ভর করে আমরা টিকে থাকতে পারি। সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে সব ফলের গাছ। সামনের দিনগুলো কীভাবে মোকাবেলা করব, কোনও ধারণা নেই আমাদের।
Share!