গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ মত উঠে আসে। রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমসচিব মিকাইল শিপার।মূল প্রবন্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন স্থায়ী একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি কমিটি সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা তুলে ধরেন। সরকারি প্রতিনিধি, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আলোচনায় অংশ নিয়ে মালিক–শ্রমিক প্রতিনিধিদের কেউ কেউ কমিটিতে ক্রেতাদেরও অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।আলোচকদের কেউ কেউ এ-ও বলেছেন, সমস্যা সমাধানে স্থায়ী কমিটি গঠন করা হলে সেটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাস্তবায়নেরবাধ্যবাধকতাটিও আইনগতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। নইলে এ ধরনের কমিটি কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। এর আগেও অ্যাডহক বা ক্ষণস্থায়ীভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে এ ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আইনি ভিত্তি না থাকায় সেসব কমিটির খুব বেশি কিছু করার সুযোগ ছিল না।প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিকাইল শিপার বলেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন না হলে শুধু আইনকানুন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে না। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে মালিক-শ্রমিক দূরত্ব কমে আসছে।শ্রমসচিব আরও বলেন, শ্রম আইন সংশোধন করে তাতে নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে শ্রমিকের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কারণ বর্তমানে শ্রমিকের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের বেশ ঘাটতি রয়েছে। এ সময় তিনি সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের পক্ষে তাঁর সম্মতির কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। সেটির ভিত্তিতে কাজ শুরু করি।’অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা ২০২১ সালের মধ্যে ৫ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ককে অংশীদারত্বমূলক করতে হবে। যেকোনো ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনা অব্যাহত রাখতে হলে একটি স্থায়ী ব্যবস্থাও থাকা উচিত।বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের পক্ষ থেকেও আমরা এখন সমস্যা সমাধানে আলোচনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এ খাতে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো হয়তো অনেকের প্রত্যাশা অনুযায়ী সমাধান হচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা সমাধানে অনেক দূর এগিয়েছি আমরা।’নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে পোশাক খাতের অনেক সমস্যা আদালতের বাইরে সমাধান করা হচ্ছে। ত্রিপক্ষীয় স্থায়ী কমিটিতে বিদেশি ক্রেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন তিনি।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এখনো পোশাক খাতে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে বড় ধরনের দূরত্ব রয়েছে। সবার আগে দরকার তা কমিয়ে আনা। সে ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় কমিটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা রায় রমেশ চন্দ্র, সলিডারিটি সেন্টার ঢাকার কর্মসূচি পরিচালক এলানজো সুশান, শ্রমিকনেতা বাবুল আকতার প্রমুখ।
পোশাক খাতের সমস্যা সমাধানে স্থায়ী ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের দাবি
Share!