Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

আড়াইশ’ টাকার চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে খাদিজা বেগম নার্গিসকে

সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আড়াইশ’ টাকা দিয়ে চাপাতি কেনে বদরুল। সেই চাপাতি দিয়েই সোমবার বিকালে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সে। বুধবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে এ কথা জানিয়েছে। জবানবন্দিতে বদরুল ঘটনার সব দায় স্বীকার করেছে। এর আগে পুলিশের কাছে এসব কথা স্বীকার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এই ছাত্রলীগ নেতা।বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সরাবান তহুরার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হামলার পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছে বদরুল।বিকেল ৩ টা থেকে সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত ওই আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।জবানবন্দিতে বদরুল জানিয়েছে, নার্গিসকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেও তার কাছ থেকে কোনও সাড়া পায়নি সে। এভাবে অনেকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হওয়ায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সে নগরীর আম্বরখানা থেকে আড়াইশ’ টাকা দিয়ে একটি চাপাতি কেনে।বদরুল জানায়, ‘সোমবার এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম নার্গিসের সঙ্গে শেষ বোঝাপড়া করতে। সঙ্গে চাপাতি নিয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনও মুখোমুখি হতে চাইলে সে এড়িয়ে যায়। এরপর রাগ করে কোমরে থাকা চাপাতি দিয়ে বান্ধবীদের সামনেই নার্গিসকে কোপাতে থাকি।’সে দাবি করেছে, ‘নার্গিস স্কুলে পড়ার সময় সে তাদের আউশা গ্রামের বাড়িতে লজিং থেকেছে। ওই সময় নার্গিসকে কিছুদিন পড়িয়েছে। তখনই সে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু, নার্গিস বিষয়টি বাড়িতে জানিয়ে দেয়। সে কারণে তাকে ওদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।’আদালতে জবানবন্দি শেষ হওয়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘আদালতের কাছে সব কিছু স্বীকার করেছে বদরুল। জেদের কারণেই সে খাদিজাকে কুপিয়েছে বলে আদালতে জানায়। তিনি বলেন, আদালত জবানবন্দি গ্রহনের পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’সিলেট মহানগর পুলিশের (দক্ষিণ) এডিসি বাসুদেব বণিক জানিয়েছেন, ‘এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে গুরুত্ব সহকারে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ।’সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুছা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘নগরীর আম্বরখানা থেকে আড়াইশ টাকা দিয়ে চাপাতি কেনার কথা স্বীকার করেছে বদরুল। আর ওই চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে নার্গিসকে। পুলিশ রক্তমাখা ওই চাপাতিটি উদ্ধার করেছে।’সিলেটের শাহপরান থানার ওসি শাহজালাল মুন্সিও সাংবাদিকদের জানান, বদরুল আদালতে সব কিছু স্বীকার করেছে। এর আগে পুলিশের কাছেও সব দায় স্বীকার করেছে সে।সোমবার এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে নার্গিসকে কোপানোর পরপরই স্থানীয়রা ধাওয়া করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক বদরুল আলমকে আটক করে। এরপর তাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গণধোলাইয়ের কারণে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে তাকে শাহপরান থানায় নিয়ে আসা হয়।। সেখানে সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করে বদরুল।পরে বিকালে তাকে সিলেট মহানগর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।এদিকে, এ ঘটনার পরপরই নার্গিসকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হেলিকপ্টারে করে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। মঙ্গলবার সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে জটিল অপারেশনের পর নার্গিসকে রাখা হয়েছে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণেএদিকে, নার্গিসের ওপর নৃশংস হামলার কারণে তাকে শাবিপ্রবি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্কয়ার হাসপাতালে নার্গিসকে দেখতে এসে জানান, ‘বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নয়।’ অন্যদিকে এ ঘটনায় বদরুলকে আইনের হাতে তুলে দিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top