Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

হাসি সুখ, আনন্দ ও সুস্থতার প্রতীক

 হাঁচি কিংবা কাশির শব্দ শুনলে যেমন আমরা বুঝতে পারি অসুস্থতা, তেমনি হাস্যরসের আওয়াজ শুনলে আমরা বুঝি বিরাজ করছে সুখ, আনন্দ ও সুস্থতা। হাসি প্রাকৃতিক, হাসি স্বাভাবিক।কিন্তু হ্যাঁ, সত্যিই হাসির রয়েছে নানা মনোদৈহিক উপকারিতা। হাসি শুধু মজা করার জন্য নয়, হাসি আমাদের অনেক দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে পারে, পারে অসুস্থকে ভালো করে তুলতে এ কথা বৈজ্ঞানিক সত্য। হাসি শক্তিদায়ক, হাসি আমাদের রোগ প্রতিরোধক শক্তিকে উজ্জীবিত করে, হাসি ব্যথা লাঘব করে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন ইন বাল্টিমোর-এর গবেষকরা রোগ নিরাময়ে হাসির প্রয়োগ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তারা প্রমাণ পেয়েছেন, রোগ নিরাময়ে হাসি উপকারী। তারা বলেছেন, অবদমিত ক্রোধ, ঘৃণা আমাদের ইম্যিউন সিস্টেমকে নিস্তেজ করে দেয়। অপরপক্ষে হাসি, আনন্দ ইম্যিউন সিস্টেমকে উজ্জীবিত করে। ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা দেখিয়েছেন, হাসি আমাদের ইম্যিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করে শ্বেতকণিকা ‘টি’ সেল তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে, ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি দৃঢ় হয়, নানা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারি। আমরা যখন হাসি তখন আমাদের রক্তচাপ কমে যায়। বৃদ্ধি পায় ন্যাচারাল কিলার সেল যারা হিউমার ধ্বংস করে ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে সক্ষম। বৃদ্ধি পায় গামা ইন্টারফেরন, টি সেল ও বি সেল, ফলে বেশি বেশি তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। হাসি শ্বাসতন্ত্রকে পরিষ্কার করে দেয় শ্বাসনালীতে লেগে থাকা মিউকাস ছুটিয়ে দিয়ে। এ সময় বেড়ে যায় থুথুতে নিঃসৃত স্যালিভারি ইম্যিউনোগ, ফলে তা শ্বাসতন্ত্রে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিহত করে।কঠিন বিরূপ পরিস্থিতিতে অবলীলায় হাসতে পারা এক বিরল যোগ্যতা। আপনি যখন হাসতে থাকেন, তখন কোন বিষণ্নতা, ক্রোধ, দুশ্চিন্তা বা দুঃখবোধ আপনাকে গ্রাস করতে পারে না। হাসি আপনার মনকে ভালো করে দেয় এবং এই ভালো লাগা রয়ে যায় হাস্য-কৌতুকের পরিবেশ থেকে চলে আসার পরও অনেকক্ষণ।মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১০০ বার হাসি ১০ মিনিট নৌকা চালানো কিংবা ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান শারীরিক কসরত। রক্তচাপ কমে যায় বটে কিন্তু শারীরিক সঞ্চালনের কারণে সবখানে রক্ত চলাচল যায় বেড়ে। রক্তে সংযুক্ত হয় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন। হাসিতে ডায়াফ্রাম, পেটের ও রেসপিরেটরি মাংসপেশিসমূহ এবং মুখ, এমনকি পা কিংবা পিঠের মাংসপেশির চমৎকার এক্সারসাইজ হয়। এজন্য উচ্চ হাসির পর আমরা খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং হাঁপাতে থাকি। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ও গভীর হয়ে পড়ে। শরীরের অভ্যন্তরেও ঘটে অনেক শারীরবৃত্তিক ও রাসায়নিক পরিবর্তন। সব মিলিয়ে এ যেন খানিকটা ‘অ্যারোবিক’ শরীরচর্চা। তাই বলা হয় হাসি থেকে ওজন কমার মতো উপকারও পেতে পারি। এ ছাড়া হাসি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়। আমাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় বিরাট ভাবে। হাসির জানালা দিয়ে উবে যায় যে কোন চাপা ক্ষোভ, রাগ, দুঃখ কিংবা গ্লানিবোধ, যা হয়তো বড় কোন মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারতো।তাই বলা হয়, হাসি শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক ওষুধ। বিনা খরচে হাসি রোগমুক্তি দেয়। এর জন্য আমাদের কোন জিমে যাওয়ার দরকার নেই। দরকার নেই কোন প্রশিক্ষণের। হাসি আমাদের জন্মগত প্রবৃত্তি। নবজাতক শিশু জন্মের প্রথম সপ্তাহেই হাসতে শুরু করে এবং প্রথম মাসেই সশব্দে হাসতে পারে। বড় হতে হতে গাম্ভীর্য এসে ভর করে আমাদের ওপর। তাই হাসি শিখতে হলে, প্রাণ খুলে হাসতে হলে তাকাতে হবে শিশুদের দিকে। তাদের দুনিয়া আনন্দময়। তুচ্ছ কারণে তারা হাসতে পারে। হাসার জন্য তাদের কোন লজিক লাগে না। তাই আসুন আমরা বেশি বেশি হাসি, জীবনকে আনন্দময় করে তুলি এবং সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করি।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top