Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

শ্বাসকষ্ট মানেই রোগ নয়, একটি রোগের লক্ষণ

শ্বাসকষ্ট একটি যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ এবং একটি শারীরিক সমস্যা। শ্বাসকষ্ট মানেই রোগ নয়, একটি রোগের লক্ষণ। একটু দৌড়ে এলে বা পরিশ্রম করলে সকলেরই অল্প বিস্তর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চলতে থাকে। কিন্তু শ্বাসকষ্ট হলে ধরে নিতে হয় যে কোনো রোগের আলামত প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকে শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি মনে করেন এবং হাঁপানি ভেবে এই রোগের সনাতনী চিকিৎসা শুরু করে দেন। হাঁপানি হলে অবশ্যই শ্বাসকষ্ট হয়। তবে সব শ্বাসকষ্টই হাঁপানি নয়। ফুসফুসের হাঁপানি হলো একটি বিশেষ ধরনের শ্বাসকষ্ট। সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এই শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর বুকের ভেতরে বাঁশির মতো শব্দ হয় এবং সঙ্গে কাশি ও বুকের ভেতর শ্বাস বন্ধ ভাব অনুভূত হয়। এত গেল ফুসফুসের হাঁপানির কথা। এছাড়াও হৃৎপি-ের বাম দিকের অংশ অকেজো হয়ে পড়লেও তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় যাকে হৃদযন্ত্রের হাঁপানি বলে। ফুসফুসের হাঁপানি এবং কার্ডিয়াক (হৃদযন্ত্রের) হাঁপানি উভয় রোগেই শ্বাসকষ্ট থাকে। তবে একজন চিকিৎসক রোগীর বয়স, লক্ষণ এবং বুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনায়াসেই বলে দিতে পারেন যে রোগী কোন ধরনের হাঁপানিতে ভুগছেন। কার্ডিয়াক হাঁপানি বা লেফট হার্ড ফেইলুর এবং ফুসফুসের হাঁপানি ছাড়াও কিডনির বৈকল্যের জন্যও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যাকে অনেক চিকিৎসক রেনাল অ্যাজমা বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে হাঁপানিরও কত রকমের প্রকার ভেদ রয়েছে। এবং বিভিন্ন অঙ্গে বৈকল্য বা সমস্যার জন্যও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। যদিও এই তিন ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্ট হয়, তবুও এর কারণ ভিন্ন হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ভিন্নতর হয়ে থাকে। এটি হাঁপানিজনিত শ্বাসকষ্টের কথা। এছাড়া যেহেতু আমরা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস নিয়ে থাকি তাই ফুসফুসের যে কোনো ধরনের সমস্যা বা রোগেই শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া নামটা প্রায় বহুল পরিচিত সবার কাছেই। এই নিউমোনিয়া কিন্তু ডজন ডজন কারণে হতে পারে। তবে যে কোনো কারণেই এই নিউমোনিয়া হোক না কেন এই রোগের একটি প্রধান উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট। অবশ্য শ্বাসকষ্ট নির্ভর করে ফুসফুসের আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপকতার উপর অর্থাৎ ফুসফুসের যত বেশি অংশ আক্রান্ত হবে শ্বাসকষ্ট তত বেশি প্রকট হবে। ক্রনিক ব্রংকাইটিসের নামতো অনেকেই জানেন। এই রোগের বিভিন্ন কারণের মধ্যে অতিরিক্ত ধূমপান, ধুলা এবং ধোঁয়াময় পরিবেশ অর্থাৎ দূষণ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এই ক্রনিক ব্রংকাইটিস হয়ে থাকে। বাহ্যিকভাবে ক্রনিক ব্রংকাইটিস রোগটির সঙ্গে ফুসফুসের হাঁপানির অনেক মিল রয়েছে, যদিও দুটি রোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের এবং ভিন্ন প্রকৃতির। এই রোগ হলে শ্বাসকষ্ট দিন দিন বাড়তেই থাকে। এবং অনেক রোগী আছেন যারা নিজেকে হাঁপানি রোগী মনে করে থাকেন। হঠাৎ করে শ্বাসনালিতে কোনো পদার্থ ঢুকে গেলেও প্রচ- শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এটা অবশ্য শিশুদের বেলায় বেশি হয়ে থাকে। অনেকে শিল্প-কারখানায় কাজ করতে করতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। বিশেষ বিশেষ শিল্প-কারখানাজনিত রোগ হয়ে থাকে_ যার প্রতিটি রোগেরই লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট। বাংলাদেশে ফুসফুসের যক্ষ্মা একটি অন্যতম প্রধান বক্ষ্যবাধি। যক্ষ্মা থেকে ফুসফুসের বৃহৎ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। যক্ষ্মার নিরাময় ওষুধ খাওয়ার পর সেরে গেলেও শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। শ্বাসকষ্ট অব্যাহত থাকার ফলে রোগীকে বিশ্বাসই করানো যায় না যে তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। ফুসফুসের ক্যান্সার বা যে কোনো ধরনের টিউমার হলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক রোগীকে দেখেছি যে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। পরে দেখা যায় যে, সে মানসিক কোন সমস্যায় ভুগছে অর্থাৎ সেই বিশেষ ধরনের সমস্যা দেখা দিলেই রোগীটি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। হিস্টিরিয়া আক্রান্ত রোগী তো অনেকেই দেখেছেন। হিস্টিরিয়া রোগীর শ্বাসকষ্ট কত ভয়ানক হতে পারে যা অকল্পনীয়। অনেক সময় দেখেছি ক্রিমিজনিত কারণেও শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। সেই শিশুকে মাসের পর মাস হাঁপানির ওষুধ খাওয়ানো হয় কিন্তু এক কোর্স ক্রিমির ওষুধ দিলেই দেখা যায় শিশুটির শ্বাসকষ্ট সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।বাংলাদেশে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণের ফলেই তা হচ্ছে। শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি নয়। শ্বাসকষ্টের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং তা শনাক্ত করে তার প্রকৃত এবং সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রয়োগ করলেই শ্বাসকষ্ট ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top