প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ৭০ বছরে পা দিলেন। বয়সের অর্ধেক সময় (৩৫ বছর) ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলের নেতৃত্বের দিক থেকে তিনি পিতা বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে গেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ঐক্যের প্রতীক মনে করে। তার নেতৃত্বে দল অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বলে দাবি দলটির।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে দল। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে দলের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে টানা ৩৫ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় তিনি সাতবার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।দলের নেতৃত্বের দিক থেকে শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে বেশ আগেই ছাড়িয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠাকালে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৩ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে টানা ১৩ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৬৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এ হিসেবে তিনি ২৫ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ৪ টার্মে ৮ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা ৭ টার্মে টানা ৩৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শেখ হাসিনা সভাপতির দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হলেও এটা তার রাজনীতির হাতেখড়ি ছিল না। স্কুল জীবনেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে তার নেতৃত্বে মিছিল গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যায়নকালে ১৯৬৬-১৯৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু তার রাজনৈতিক জীবনের পথ চলা। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হন।দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী,প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে। তার নেতৃত্বে দল তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। একই সঙ্গে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিনবার সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনার হাত দিয়েই দেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জন বয়ে এনেছেন তিনি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন।রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআসম আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এ ভূখণ্ড থেকে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠানোর চক্রান্ত চলছিল, ঠিক তখনই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। তিনি দীর্ঘদিন দলের পাশাপাশি সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা তার অসাধারণ অবদান।’এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ’এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ৪১ বছরে সব চেয়ে সাহসী নেতার নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা।’সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বীর কন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে, ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ, তার জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাহসী সিদ্ধান্ত। এই পরীক্ষা- অগ্নি পরীক্ষা। ৩৮ শতাংশ পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। আজকে সারা দুনিয়ায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আরেক ধাপ উপরে নিয়ে গেছেন।’তিনি বলেন, ‘৩০ হাজার কোটি টাকায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ নদী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি। বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে চোর আখ্যা দিয়ে পদ্মা সেতু থেকে চলে গিয়েছিলো। শেখ হাসিনা আজ প্রমাণ করে দিয়েছেন আমরা চোর নই, আমরা বীরের জাতি।’শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কাদের বলেন, ‘৩০ হাজার কোটি টাকায় যে নেত্রী পদ্মা সেতু করতে পারেন, তিনি মরে গেলেও তার এই লিগেসি কোনও দিনও হারিয়ে যাবে না। পলিটিক্যাল লিগেসির জন্য বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন। যতদিন লাল-সবুজের পতাকা উড়বে, যতদিন আমার সোনার বাংলা জাতীয় সঙ্গীত ধ্বনিত হবে অগণিত বাঙালির হৃদয়ে, বঙ্গবন্ধুও বেঁচে থাকবেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। শেখ হাসিনার ৭০ তম জন্মদিনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু কন্যা ৭০ বছর উন্নয়ন-অর্জনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই লিগেসির কোনও দিনই মৃত্যু হবে না।’আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক। তার দক্ষতায় ও নেতৃত্বে দল আজ ঐক্যবদ্ধ ও যেকোনও সময়ের তুলনায় শক্তিশালী। শেখ হাসিনা ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে নানা চড়াই উৎরাই পার করে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তিনি দলকে কেবল ক্ষমতায়ই আনেননি। নিজেকে দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশ ও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার মত একজন নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য এদেশের মানুষ নিজেদেরকে ধন্য মনে করেন।’আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির জন্য আর্শীবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারসহ হত্যার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি জননেত্রী থেকে গণতন্ত্রের মানস কন্যায় পরিণত হয়েছেন।’তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘসহ ২৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও বাংলাদেশের মানুষকে সম্মানিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নন, বিশ্ব মানবতার নেত্রী
Share!