মোঃ সালাউদ্দিন ঃ রাজধানী ঢাকার শ্যামপুরে যৌতুক লোভী স্বামী ও শুশুর শাশুড়ী কর্তৃক গৃহবধুকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রাতের আধাঁরে শ্বশুর বাড়ীর নিজস্ব বাসভবনের তিন তলার ছাদ থেকে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ী মেরে ফেলার উদ্দেশে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেন গৃহবধু ইলা আক্তার অপর্নাকে। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যান দেড় বছর সন্তানের জননী। মৃত্যু নিশ্চিত হতে গেলে প্রতিবেশি দেখে ফেলায় আতœহত্যা বলে চালানোর অভিযোগও উঠেছে স্বামী, শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৬ ই মার্চ, রাতে শ্যামপুরের বাহাদুরপুর লেনের ১১/ক, নম্বর অপর্নার ঘাতক স্বামীর বাড়ীতে। মামলার বিবরণে ও অনুসন্ধানে জানা যায় পারিবারিক ভাবেই ২০১৩ইং তারিখে বিয়ে হয় স্বামী টুটুলের সাথে। বিয়ের সময় শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের কোন দাবী দাওয়া না থাকলেও মেয়ের সুখের জন্য অপর্ণার বাবা মা ফার্নিচার বাবদ তিন লক্ষ টাকা দেন। প্রথম দিকে অপরর্ণার সুখের সংসার কাটলেও আস্তে আস্তে অপর্নার স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ীর আসল রূপ প্রকাশ পায়। সংসারে অশান্তি তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন শ্বাশুড়ী ও ননদী সাজু। কথা বার্তার চাল চলনে শুধু যৌতুক প্রসঙ্গই উঠে আসে। টাকার জন্য স্বামী,শ্বশুর চাপ দিতে থাকে অর্পনাকে। মাঝে মাঝে স্বামী টুটুল তালাবদ্ধ করে রাখত ও বেদম প্রহার নির্যাতন চালাতো। গায়ে গরম পানি ঢেলে ও গরম ছেঁকা দিয়ে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো ঘাতক স্বামী টুটুল। এক পর্যায়ে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে অর্পনার বাবা মা আরও দুই কিস্তিতে চার লক্ষ টাকা টুটুলের বাবার হাতে দেন। ইতিমধ্যেই অপর্ণার কোল জুড়ে আসলো পুত্র সন্তান ইফাত। সুখ যেন হাত ছানির অনেকটা দুরে অপর্ণার। টাকার লোভে আবারও পাঁচ লক্ষ টাকার দাবী অপর্ণার স্বামীর। নির্যাতন প্রতিনিয়ত চলছে, ঘটনার দিন ০৬/০৩/২০১৬ইং তারিখে অপর্ণার ননদ সাজু ও তার স্বামী রাজুকে ডাকা হলো অপর্ণার শ্বশুরালয়ে। সেখানে ভবনের দ্বিতীয় তলায় অপর্ণার স্বামী, শ্বশুর শাশুড়ী, ননদ সাজু ও তার স্বামী রাজু গোপন বৈঠকে বসে। কিছুক্ষনের মধ্যেই অপর্ণাকে ডেকে আনা হয়। শ্বাশুড়ী কাঠের একটি লাঠি এগিয়ে দেন ছেলে টুটুলকে আর বলেন ওকে মার। ননদ সাজু চুলের মুঠি ধরে রাখে আর টুটুল পিটাতে থাকে, বেধড়ক লাঠি চার্জে অপর্ণা রক্তাক্ত ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে। টুটুল ও শ্বশুর শ্বাশুড়ী মিলে তিন তলার ছাদে নিয়ে নিচে ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত এর চেষ্টা করলেও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশি জানাজানি হয়ে গেলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ও সুমনা হসপিটাল (সদরঘাট শাখায়) ভর্তি করা হয় অপর্ণাকে। পরদিন জ্ঞান ফিরে অপর্ণা নিজেকে সুমনা হসপিটালে আবিস্কার করে। পাশের বেডের রোগীর মাধ্যমে তার বাবা মাকে জানায়। কথাগুলো বলেই কাঁদতে লাগলো অসহায় গৃহবধু অপর্ণা। মেডিকেল রিপোর্টে জানা যায় অপর্ণার পিছনের মেরুদন্ড পুরোটাই ভেঙ্গে গেছে। অপর্ণার পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে সেখানেও বিভিন্ন তাল বাহানায় কালক্ষেপনের অভিযোগ পাওয়া যায় স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। দুই দিন পরে থানায় একটি মামলা রুজু হয়, মামলায় আসামি করা হয় স্বামী টুটুল (২৪), শ্বাশুড়ী ইসরাত জাহান (৫০), ননদী সাজু আক্তার ও তার স্বামী মোঃ রাজু (২৮)। পরবর্তীতে গত ১০ ই মার্চ গভীর রাতে স্বামী ও শ্বাশুড়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু গ্রেফতার এর তিন দিন পরে জামিনে আসে শ্বাশুড়ী। বাকী দুই জন আসামী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার থেকে অপর্ণার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হুমকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী ও রয়েছে। বিশ্বটি প্রসঙ্গে শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন মামলাটি বর্তমানে চার্জশিট হয়ে গেছে। দুই জন আসামি পলাতক আছে তাদেরকে পলাতক দেখিয়ে চার্জশীট করা হয়েছে তবে আসামিদের ধরার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
শ্যামপুরে যৌতুকের লোভে গৃহ বধুকে হত্যার চেষ্টা, মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি।
Share!