মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তৃতীয় শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির অন্যতম পরিকল্পনাকারী চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং বলেন, ৮১ মিলিয়ন ডলার এদেশে এনেছে দুই বিদেশী। বেইজিংয়ের শুহুয়া গাও এবং ম্যাকাওয়ের ডিং জিজের নাম বলেছেন তিনি। সিনেট কমিটির সামনে আসার আগে অবশ্য স্থানীয় গণমাধ্যমের সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন কিম অং। এ সময় শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার বরখাস্ত হওয়া জ্যেষ্ঠ কাস্টমার রিলেশনস অফিসার এ্যাঞ্জেলা তোরেস। রিবন কমিটির শুনানিতে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস-দেগিতোর দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ জালিয়াতিতে কিম অংয়ের নাম আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ থেকে হাতিয়ে নেয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ওই ব্যাংকেরই চারটি এ্যাকাউন্টে জমা হয়। তবে সিনেট কমিটির শুনানিতে ওই চার এ্যাকাউন্টের মালিককে তলবের জন্য নাম-ঠিকানা খুঁজলে দেখা যায় সেগুলো ভুয়া। ব্লু রিবন কমিটির সদস্য সিনেটর সের্গিও ওসমেনাকে উদ্ধৃত করে ইনকোয়ারার এর আগে জানিয়েছিল, কিম অংই ওই ভুয়া এ্যাকাউন্টগুলো খুলতে বলেছিলেন দেগিতোকে। ফিলরেম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ডলার ভাঙানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছিলেন। ১৫ বছর আগেও কিম অং একবার সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানির মুখোমুখি হন। অবৈধ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা-ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক সিনেটরের সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। তথ্যানুযায়ী, ১০ বছর বয়সে চীন থেকে ফিলিপিন্সে আসেন অং। কলেজের ছাত্র থাকাকালে লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির কাজে যোগ দেন। পরে নিজেই একজন ব্যবসায়ী বনে যান এবং পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কিম অংয়ের সঙ্গে মায়া সান্তোস-দেগিতোকেও মঙ্গলবারের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে। দেগিতোর খোলা সেই সব এ্যাকাউন্ট থেকে রিজার্ভ চুরির টাকা তুলে ফিলিপিন্সে ক্যাসিনো ‘জাঙ্কেট অপারেটর’ ওয়েইকাংক হু’র এ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপিন্সে ক্যাসিনোগুলোতে আর্থিক লেনদেনের ওপর নজরদারির দায়িত্বে থাকা সংস্থা প্যাগকর আগেই জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪৬ মিলিয়ন স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর হওয়ার পর ক্যাগায়ান প্রদেশের সোলায়ার রিসোর্ট এ্যান্ড ক্যাসিনো এবং ইস্টার হাওয়াই ক্যাসিনো এ্যান্ড রিসোর্টের মাধ্যমে দেশের অর্থ ব্যবস্থায় মিশে গেছে। এর মধ্যে সোলায়ার রিসোর্ট এ্যান্ড ক্যাসিনোতে ‘জাঙ্কেট অপারেটর’ ওয়েইকাংক হু মাধ্যমে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার হাতবদল হয় বলে সিনেট কমিটির শুনানিতে উঠে এসেছে। রিজার্ভ পাচারের অভিযোগে ওয়েইকাংক হু এবং কিম অংয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলাও করেছে ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার কাউন্সিল-এএমএলসি।
Share!