আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথম ধাপে ৭২১টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে। এই ধাপে তিনটি পদে ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে ভোটকেন্দ্র ৭ হাজার ৮৭টি এবং ভোটার ১ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১ জন।এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার কাজ শেষ হয় রোববার দিবাগত রাত ১২টায়। তাই এদিন ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা।স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে।রোববার নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানান, ভোটের জন্য প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের প্রচার রোববার মধ্যরাতে বন্ধ হয়ে গেছে। ভোটকে সামনে রেখে যে আইন লঙ্ঘন করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।শাহনেওয়াজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। এরপরও ইতোমধ্যে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তা তাদের নজরে এসেছে। বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছেন। আশা করেন, সামনে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে না।ইউপিতে প্রথম ধাপের এই নির্বাচনে ইতোমধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ৬২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আদালতের নির্দেশে আট ইউপিতে প্রার্থী যোগ হওয়ায় বাকি ৫৪ জন নির্বাচিত হন।মঙ্গলবার ৭২১ ইউপির ভোটের লড়াইয়ে আছেন চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৩৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন।এরপর আরো পাঁচ ধাপে দেশের বাকি সাড়ে তিন হাজার ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা।ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন নিষিদ্ধ। ভোটের পর ৪৮ ঘণ্টাও কোনো মিছিল করা যাবে না।মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোট উপলক্ষে এদিন সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি।গোলযোগ-সহিংসতার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় এ নির্বাচনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোববার মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রচারের সময় শেষ হওয়ার আগে বহিরাগতদের ছাড়তে হবে নির্বাচনী এলাকা।ইতোমধ্যে প্রচারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিভাগেই অন্তত সাতজনের প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে কয়েকশ’ লোক আহত হয়েছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২০ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত রাখা হচ্ছে এবার। ভোটের আগের দুই দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত চারদিন থাকবে তারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা সদস্য বাড়াবে স্থানীয় প্রশাসন।
দলভিত্তিক এ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি। সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুধু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে কাজ সেরেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।
প্রথম ধাপের ইউপি ভোটে ১৪টি দল অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে।
অবশ্য ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম বলেন, ‘রোববার থেকে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি উপজেলায় তিনজন নির্বাহী হাকিম ও একজন বিচারিক হাকিম থাকবেন। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’তিনি জানান, নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে। সোমবার বিকালের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসবে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, আনসার ব্যাটালিয়ন ও আনসার-ভিডিপির প্রহরা; টহলে থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।তফসিলে প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় স্থগিত ও পিছিয়েছে ৩১টির ভোট। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ১১ ইউপির ভোট ২৩ মার্চ ও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দুটি ইউপির ভোট ২৭ মার্চ হবে।উপ-সচিব সামসুল আলম বলেন, ইউপি ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় উপজেলাভিত্তিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন প্লাটুন করে বিজিবি রাখা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে র্যাবের তিনটি টিমও।উপকূলীয় এলাকায় বিজিবির পরিবর্তে কোস্টগার্ড থাকবে। প্রতি ইউনিয়নে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।
ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ইসি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের ৭৫২ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়।সে অনুসারে পরবর্তীতে ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টি ইউপি, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮ মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা।
ইউপি ভোটে সব কেন্দ্র সমান
নিরাপত্তা পাবে: আইজিপি
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে ‘ঝুঁকি’ নির্বিশেষে সব কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হবে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক।
প্রথম ধাপে মঙ্গলবারের ভোট সামনে রেখে রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বলে কোনো কেন্দ্র নেই। সব কেন্দ্রকেই আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’ভোটের সময় ও আগে-পরে তিন ধাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশপ্রধান।প্রার্থী ও সমর্থকসহ সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব-আনসারের এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত রয়েছে।’নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো গ-গোল হলে ছাড় দেয়া হবে না বলে সতর্ক করে দেন আইজিপি।সাংবাদিকদের তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত ২০৮টি সহিংস ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৫টি সাধারণ ডায়েরি ও ১৪৩টি মামলায় ৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’তবে এসব ঘটনায় সরাসরি কোনো প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি,’ বলেন পুলিশপ্রধান।প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমান ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কাল ৭২১ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট
Share!