পে-স্কেলের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কালো ব্যাজ পরে ক্লাশ নিচ্ছেন ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ রবিবার থেকে আগামী ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে। এর আগে গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে তিন ঘণ্টার বৈঠকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এ সময় ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বলা হয়েছিল, শিক্ষকদের দাবি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ সময় কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এমনকি সান্ধ্যকালীন কোর্স পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে এর আগে ৭ জানুয়ারি সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
দাবি পূরণ করে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, কর্মসূচি চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য ডাকা হলেও কর্মসূচি বন্ধ করা হবে না।
ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে ফেরার আর সুযোগ নেই। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। কিন্তু সচিবদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে অষ্টম পে-স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পে-স্কেলের বৈষম্য নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ফেডারেশনের নেতাদের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষক নেতারা জানান, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ৩টি দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এগুলো হলো : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় পে-স্কেলের অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা। এ ক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা না কমানো; সিনিয়র সচিবদের গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা। কিন্তু প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে সিলেকশন গ্রেড ছাড়া অন্যকোনো দাবি পূরণের লক্ষণ নেই বলে জানান শিক্ষক নেতারা।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভা থেকে সরকারকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ ছাড়াও অষ্টম পে-স্কেল সংশোধনের পর আবার গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে ২৪ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা কমিটির সাত সদস্যকেও চিঠি দেন শিক্ষক নেতারা। এর পরে ২৭ ডিসেম্বর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সাধারণ সভা করে। এমনকি এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি আদায় না হলে অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘কমপ্লিটলি শাটডাউন’ (পুরোপুরি বন্ধ) করার হুমকিও দেন।