মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আজ বুধবার সকালে নিজামীর পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয় এবং দুপুরে তা শেষ হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আদালতে নিজামীর শাস্তি লাঘবের দাবি জানান তার আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। আদালতে নিজামীর আইনজীবী বলেন, কোনো আর্মি মুভ করত না যদি পুলিশ লিড না দিত। নিজামীর মতো ইয়াং ম্যান পথ দেখিয়ে দিল আর আর্মি (পাকিস্তানী আর্মি) সেই পথে গেল, তা কুয়াইট ইমপসিবল। ওই সময় পুলিশ পথ দেখিয়েছে আর আর্মি সেই পথে গিয়েছে। নিজামীর আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, তিনি (নিজামী) সবাইকে শহীদ মাদানির পথ অনুসরণ করে জিহাদী ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছেন।
এটা ইঙ্গিত করে যে, তিনি (নিজামী) এক বাহিনীর প্রধান ছিলেন। রাজাকার-আলবদর না থাকলে স্বাধীনতা যুদ্ধ ১০ মাস দীর্ঘস্থায়ী হতো না, বলেও জানান আদালত। এর আগে, ২৫ নভেম্বর নিজামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৩০ নভেম্বর এবং ১ ও ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন একই আপিল বেঞ্চ। একই সঙ্গে ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৮ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী সোমবার নিজামীর পক্ষে প্রথম দিনের মতো, মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো এবং বুধবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়। এরও আগে, ১৭, ১৮ ও ২৩ নভেম্বর নিজামীর আপিল শুনানিতে পেপারবুকের কিছু অংশ পাঠ করেন নিজামীর আইনজীবী। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হয়।
মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আনা হত্যা, বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এসব অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ২৩ নভেম্বর মতিউর রহমান নিজামী আপিল করেন। মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে এ আপিল করা হয়। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি।