Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

২৩৬ পৌরসভায় ভোট ৩০ ডিসেম্বর

সারা দেশে ২৩৬টি পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর রাখা হচ্ছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর রাখা হয়েছে। সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশনারদের সভায় পৌরসভা নির্বাচনের এ তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। আজ নির্বাচন কমিশন পৌর নির্বাচনের এ তফসিল ঘোষণা করবে। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা কমিশন সচিবালয়ে তফসিলের খসড়া প্রস্তুত করেন। এর আগে সন্ধ্যায় পৌর নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে কমিশন সচিবালয়ে এসে পৌঁছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, এবার প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠান পৌরসভায় দলীয়ভাবে মেয়র পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে। একই পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় ও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় নির্বাচন- একই সঙ্গে এই দুই প্রক্রিয়াকে জগাখিচুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ২৬৯টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করেছিল কমিশন। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে চার ধাপে পৌরসভাগুলোতে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। এসব পৌরসভার বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ রয়েছে মার্চ পর্যন্ত। বিধান অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। জানুয়ারিতে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ ও ফেব্র“য়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা বিবেচনায় রেখে ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ করেছে ইসি। এ নির্বাচনে দুই সপ্তাহ প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা।নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশাবাদ, দলীয়ভাবে পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন হতে যাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ নির্বাচনী প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা চালাবে। এর আগে সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনগুলো নির্দলীয় হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা গেছে। এবার দলীয় ব্যানারে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা নিজ পরিচয়ে প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ থাকছে না। একই সঙ্গে নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকাও রয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে।ইসি সূত্র জানায়, চলমান হালনাগাদে নতুন অন্তর্ভুক্ত ভোটাররা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। বিদ্যমান ভোটার তালিকার ভোটাররা কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, এবার প্রথম মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলো অংশ নিতে পারবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে কমিশন। এ কারণে এ দলটির নামে ও প্রতীকে কেউ মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারবে না। তবে কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় নির্বাচন হওয়ায় এ দলটির নেতাকর্মীরা ওই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে তারা দলীয় পরিচয়ে পোস্টার, ব্যানারে প্রচারণা চালাতে পারবেন না।কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, রোববার বিকালে পৌর নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিকাল পর্যন্ত ওই বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে না আসায় নির্বাচনের তফসিল নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তা চলে কমিশনে। বিকালে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তফসিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে গণমাধ্যম কর্মীদেরও জানিয়ে দেন। কিন্তু সন্ধ্যায় বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনে আসার পরই নির্বাচন কমিশনার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠতে দেখা যায়। রাত পর্যন্ত কমিশন সচিবালয়ে বৈঠক করেন কমিশনাররা। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো করতে দেখা যায়। সোমবার মনোনয়নপত্র ছাপানোর জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে তা বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সরবরাহ করা হয়। কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় নির্বাচন হওয়ায় আগের নির্বাচনের এবারও গ্রুপ ব্যালট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এসব ব্যালটে নির্ধারিত সংখ্যক প্রতীক থাকবে। তবে প্রার্থীর নাম থাকবে না। মেয়র পদে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক উভয়টা থাকবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, মনোনয়নপত্র ও কাউন্সিলর পদের ব্যালট মুদ্রণে অনুমতি দিয়েছে কমিশন। সোমবারই এগুলো ছাপানোর জন্য বিজি প্রেসে চিঠি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিজি প্রেস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।১২ অক্টোবর দলভিত্তিক পৌরসভা ভোট করতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের পর ৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হয়। দলীয়ভাবে সব পদে পৌর নির্বাচনের অধ্যাদেশ হাতে পেয়ে বিধিমালায় সংশোধন এনে ইসি তা ৫ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়। কিন্তু ১৫ নভেম্বর অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন বিল সংসদে উত্থাপন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেখানে পৌরসভায় দলীয়ভাবে শুধু মেয়র পদে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। ১৯ নভেম্বর বিল আকারে আইনটি সংসদে কণ্ঠভোটে পাস। এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় ২১ নভেম্বর। রোববার নতুন আইন অনুযায়ী বিধি ঠিক করে পাঠানোর জন্য আগের বিধিটি ইসিতে আইন মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠায়। ইসি তা সংশোধন করে ওইদিনই সন্ধ্যায় ভেটিংয়ের জন্য আবারও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। সোমবার বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে কমিশনে এসেছে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top