দলীয় প্রতীকে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে গোপনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে দলের করণীয় ঠিক করতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বৈঠকের আগে দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করবেন তিনি। এরপরই দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন। তবে সেক্ষেত্রে এখনও দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি। চলতি সপ্তাহে সম্ভব না হলে আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দীর্ঘ ২ মাস লন্ডন সফর শেষে আজ গুলশান কার্যালয়ে যেতে পারেন খালেদা জিয়া।বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে দলটি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তালিকা সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে এ তালিকা জমা দেয়া হবে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।জানা গেছে, বিগত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় বিভিন্ন মহলে এর যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। পরে অনুষ্ঠিত ঢাকা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে থেকে দুপুরের আগেই হঠাৎ সরে দাঁড়ানোর ঘটনায়ও দলটি সমালোচনার মুখে পড়ে। যদিও দলটির অধিকাংশ নেতা বা দলের চেয়ারপারসন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পরে ওই নির্বাচন (৫ জানুয়ারি) বর্জন করা সঠিক ছিল বলে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন।দলটি মনে করে, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনও বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই হবে। এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই আর সুষ্ঠু হবে না- এটা শুধু বিএনপির ধারণা নয়, দেশের জনগণও তাই মনে করে। তারপরও তারা নির্বাচনে যেতে চান। কারণ, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয় তা যাতে জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায় বুঝতে পারে। তাছাড়া এ মুহূর্তে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনও নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে।দলের নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের সব কূটকৌশল জানার পরও বিএনপি আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে। সে ক্ষেত্রে দলটি কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে। তাই দলটি দুটি কৌশল নিয়েই ভাবছে। একটি হচ্ছে সরাসরি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ মার্কা অথবা নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। দলের একটি অংশের যুক্তি হচ্ছে, ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলে বিএনপির আÍগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসবে। এছাড়া দলের প্রতীকের পক্ষে জানবাজি রেখে নির্বাচনের মাঠে থাকার চেষ্টাও করবে। ধানের শীষ মার্কা থাকলে সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট না চাইলেও চলবে।তবে অন্য অংশের যুক্তি হচ্ছে, সরাসরি যদি ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করা হয়, দলীয় পদে আসীন থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করতে পারবেন না। কারণে-অকারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর প্রশাসনের সহযোগিতায় হামলা চালাবে ক্ষমতাসীনরা। আবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সরাসরি বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবেন না। সে কারণে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে নির্বাচন করা হলে রাজনৈতিকভাবে বেশি লাভ হবে। এ দুটি কৌশলের উভয় দিক নিয়েই ভাবা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। তবে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচনে গেলে সরাসরিই যাওয়া উচিত।সূত্রমতে, বিগত নির্বাচনের মতো আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হলে খুব সহজেই ছাড় দেবে না। সব ধরনের অনিয়ম প্রথমে প্রতিরোধ করা হবে। যারা প্রতিরোধ করতে পারবেন সে ধরনের প্রার্থীকেই এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অগ্রাধিকার দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এক্ষত্রে প্রার্থীদের এলাকায় কার কেমন প্রভাব, বংশ পরিচয়ও দেখা হবে। কোনোভাবেই যদি ভোট কেন্দ্রের অনিয়ম প্রতিরোধ করা না যায় তাহলে ভোট বর্জন করবে দলটি। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ভোট বর্জনের নানা কারণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানানো হবে।স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ দলীয় প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এক কলমের খোঁচায় কোনো এমপির পদ যায় না। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সে বিধান রয়েছে। সেখানে সরকার যাকে খুশি তাকে বাদ দিতে পারে। তাই আমি বলব, এ ক্ষেত্রেও এমন বিধান করতে হবে যাতে ইচ্ছা করলেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো জনপ্রতিনিধির পদ বাতিল করতে না পারে। ওই একটি কালাকানুন ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দলের বহু মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিদের একের পর এক বরখাস্ত করছে।তিনি বলেন, তারপরেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন বিরাজমান, সে আন্দোলনের অংশ ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ নির্বাচন ভাবা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।এদিকে, দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২ মাসের অধিক সময় যুক্তরাজ্যে অবস্থান শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ গুলশান কার্যালয়ে অফিস শুরু করবেন।একই সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র নেতাদের ডেকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও দলের করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন। চলতি সপ্তাহে দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ সংবাদ সম্মেলনে, দুই বিদেশী হত্যা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলতে পারেন তিনি।
পৌরসভা নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি
Share!