সিলেটে বহুল আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা ও খুলনায় শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধার আলোচিত রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। মামলার বাদী রাজনের বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যাপারে আশাবাদী।এদিকে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে নির্মম নির্যাতনে শিশু শ্রমিক রাকিব হত্যা মামলার আজ একাদশতম কার্যদিবস। এত কম সময়ে এর আগে কোনো মামলায় রায় হয়নি। এ ক্ষেত্রে মাত্র ২ মাস পাঁচ দিনে রাকিব হত্যা মামলার রায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।রাজন হত্যা : গত ৮ জুলাই ভোরে নগরীর কুমারগাঁওয়ে ঘটে আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা। তিন দিন পর নির্মমতার ২৮ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বর্বর পৈশাচিক নির্যাতনের দৃশ্য নাড়া দেয় বিবেকবান মানুষকে। ঘটনার দিন রাতে রাজনের বাবা আজিজুর রহমান এজাহার দিলেও সেটি গৃহীত হয়নি। উল্টো পুলিশের এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে কেবল মুহিত আলম ও পাহারাদার ময়নার বিরুদ্ধে মামলা করেন। প্রধান ঘাতক কামরুলকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু কামরুলের নাম প্রথম থেকেই বলছিলেন রাজনের বাবা আজিজুর রহমান। ঘটনার একদিন পরই সৌদি আরবে পালিয়ে যায় ঘাতক কামরুল। টনক নড়ে পুলিশের। দেশে-বিদেশে শুরু হয় তোলপাড়। একে একে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত ১০ জনকে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা কামরুলকে আটক করে সৌদি পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১৫ অক্টোবর কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২৪ আগস্ট চার্জশিট আমলে নেন আদালত। ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযুক্তরা হচ্ছে- সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও এলাকার কামরুল ইসলাম, তার সহোদর মুহিদ আলম, বড় ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী, ছোট ভাই (পলাতক) শামীম আহমদ, সুনামগঞ্জের ঘাগটিয়া গ্রামের জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু, জালালাবাদ থানার সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার, পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া, শেখপাড়া গ্রামের দুলাল আহমদ, সুনামগঞ্জের আয়াজ আলী, শেখপাড়া গ্রামের তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল, সুনামগঞ্জের মো. ফিরোজ আলী, কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ী) মো. আজমত উল্লাহ ও হায়দরপুর গ্রামের রুহুল আমিন রুহেল। হত্যার পর লাশ গুমচেষ্টার অভিযোগে আদালতের বিচারক মুহিদ আলম ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ আনেন। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। মামলার মোট সাক্ষী ৩৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় আদালতে। এদিকে রাজন হত্যাকাণ্ডের পর মুহিদ আলমের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুছকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ। ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়
রাকিব হত্যা : গত ৩ আগস্ট বিকালে খুলনার টুটপাড়া কবরখানা মোড়ের শরীফ মোটরসে ধরে নিয়ে পায়ুপথে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে পৈশাচিক কায়দায় শিশু রাকিবকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর রাতেই পুলিশ গণপিটুনিতে আহত শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ ও তার মা বিউটি বেগম এবং পাতানো চাচা মিন্টুকে আটক করে। পরদিন রাকিবের বাবা নুরুল আলম বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় ৩ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আটক ৩ জনই পর্যায়ক্রমে আদালতে রাকিব হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপর ২০ আগস্ট ও ৬ সেপ্টেম্বর খুলনার আদালতে রাকিব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। ২৫ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী মোস্তাক আহমেদ আদালতে ৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। ৬ সেপ্টেম্বর মহানগর হাকিম ফারুক ইকবালের আদালতে চার্জশিটটি গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটির শুনানি হয়। ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চার্জ গঠন করা হয়। ১১ অক্টোবর থেকে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ৬ কার্যদিবসে ৩৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে ২৫ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর রোববার যুক্তিতর্ক শুনানি সম্পন্ন হল।