স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত খুলনার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ‘খান-এ সবুর’ নামটি পরিবর্তন করে ‘যশোর রোড’ ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ অডিটোরিয়ামের নাম পরিবর্তন করার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন হাইকোর্ট। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরও বাস্তবায়ন না করায় এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সাতদিনের মধ্যে খুলনা সিটি কপোরেশনের মেয়র এবং কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এবং আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে লিখিত আকারে এ বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
একটি আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক দুটি স্থাপনা থেকে চিহ্নিত রাজাকারের নাম পরিবর্তন করে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। এর আগে আদেশ দিলেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ পায়নি মর্মে আদালতে জানালে আদালত আজ পুনরায় সাতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে আদালতের আদেশ তাদের কাছে পৌঁছানো হবে।’
এর আগে দুই স্বাধীনতাবিরোধীর নাম প্রত্যাহার চেয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীর আবেদন করলে ২০১২ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট নাম পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন এ নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় চলতি বছরের ১৮ আগস্ট হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আদেশ বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ। ওই দিন আদেশে আদালত বলেন, খান-এ সবুর রোড পরিবর্তন করে ‘যশোর রোড’ এবং কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান অডিটোরিয়ামের নাম পরিবর্তন করতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশে গৃহায়নসচিব, শিক্ষাসচিব, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে বিবাদী করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মুসলিম লীগের নেতা খান-এ সবুর পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খঅনের মন্ত্রী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে বিচার শুরুর সময় প্রকাশিত ৬০০ স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নামও ছিল। সেই স্বাধীনতাবিরোধীর নামেই পরে যশোর রোডের নামকরণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানও ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৭২ সালে তাঁকেও দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাঁর নামেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নামকরণ হয়।
২০১২ সালের ১৪ মে স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মিত স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ কেন বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে খুলনায় খান-এ সবুর রোড ও কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান মিলনায়তনের নামকরণ স্থগিত করে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো সমাধান করেননি সংশ্লিষ্টরা। তাই হাইকোর্টে রিটের সঙ্গে সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই আবেদন শুনানির পর এই আদেশ দেন আদালত।