Saturday , 28 September 2024
সংবাদ শিরোনাম

বগুড়ায় বোমা তৈরীকালে বিস্ফোরণ, নিহত ২, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার , জঙ্গী আস্তানার সন্ধান!

জাহাঙ্গীর আলম উত্তরবঙ্গ প্রতনিধি : বগুড়ার শেরপুরে গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুরে এক ভাড়া বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়িতে বোমা তৈরীর সময় বিস্ফোরণ হয়ে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি নিহত হয়। নিহত একজন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দামুয়া গ্রামের কুদরুতুল্লাহ। এরপর গতকাল সকাল থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ তল্লাশীতে ৪ টি বিদেশী পিস্তল, ২০ টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৪০ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটর সাইকেল, দেশীয় অস্ত্র সহ বিস্ফোরক তৈরীর সরঞ্জামসহ ব্যাংক চেক বই উদ্ধার করে এবং সক্রিয় গ্রেনেডগুলো ধ্বংস করা হয়। পরে ওই বাড়িটি অনিদিষ্টকালের জন্য সিলগালা করে এবং পরিবারের সদস্যদের নজরদারীতে রেখেছে। তবে এসব বিস্ফোরকদ্রব্য আগামী পহেলা বৈশাখ ও নির্বাচনে নাশকতা করার পায়তারা করছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা ধারনা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুঠির ভিটায় মহাসড়কের ৫০ গজ পুর্বে জনৈক মাহবুবার রহমানের একতলা ভাড়া বাসায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশে পাশের লোকজন ওই বাড়ির পাশ থেকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ছটফট করতে দেখে ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এসময় খবর পেয়ে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ম্যানেজার সোহেল রানার নেতৃত্বে একটি টিম তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠায়। বগুড়া শহরের ছিলিমপুর টাউন ফাঁড়ি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (টিএসআই) শাহ আলম জানান, বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিহত যুবকের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর হবে। এছাড়া বোমার আঘাতে গুরুত্বর আহত যার দুই হাত ও বাম পা উড়ে গিয়েছিল সে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তার বয়স ৩৫ বছর হবে বলে তিনি জানান।
এ ঘটনার রাতেই বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ও জেলা ডিবি পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সরোয়ার জাহান, থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোঃ এরফান ও স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সারারাত বাড়িটি পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘিরে রাখে।
যেভাবে বিস্ফোরক উদ্ধার ও ধ্বংস করা হয়,
গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ডিবি এর কাউন্টার টেরোরিজম ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ডিডিশন এর সহকারী কমিশনার রহমতুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের টিম জেলার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ দল ওই বাড়িটিতে তল্লাশী শুরু করে। দুপুর ১টা পর্যন্ত তল্লাশী চালিয়ে বাড়ি থেকে ৪টি বিদেশী পিস্তল, ২০টি সক্রিয় হ্যান্ড গ্রেনেড, ৪০ রাউন্ড গুলি, ২টি হাসুয়া, ১টি বাজাজ মোটর সাইকেল ও ১টি বাইসাইকেল, কয়েকটি মোবাইল সিম, বাড়ির মালিকের জনতা ব্যাংক শেরপুর শাখার ৬১৬নং হিসাবের কয়েকটি চেকবহি এবং বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে বোমা ডিস্পোজাল টিল বালুর বস্তা ও মোটরের টায়ারের সন্নিবেশে ইলেট্রিক তার ও রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরপর ২০টি তাজা হ্যান্ড গ্রেনেড গুলো ধ্বংস করা হয়। এ ধ্বংসের সময় ওই এলাকায় শতশত উৎসুক জনতার ভীড় জমে।
বোমা বিস্ফোরণ ও উদ্ধার তৎপরতা যেভাবে, ওই বাড়ির পাশের বাড়ির বাসিন্দা সুমাইয়া পারভীন পলি জানান, ওই বাড়িতে বিকট শব্দ শুনে আমরা ঘরে বাইরে থেকে দেখি দুজন লোক রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে কাতরাচ্ছে। এর পরই ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে আসে। পরে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর ষ্টেশন অফিসার মো: সোহেল রানা জানান, আমারা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করি। তাদের একজন বুকে এবং অপরজনের দুই হাত ও এক পা রক্তাক্ত জখম হয়েছিল। বোমা বা বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরী বা বহনকালে এরকম ঘটনা ঘটে থাকত পারে।
যেভাবে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে,
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা এলাকার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মাহবুবার রহমান শেরপুরের গাড়িদহ ইউনিয়নের জুয়ারপুর কুঠির ভিটা এলাকায় ৬বছর আগে দুটি পৃথক ১তলা বিশিষ্ট বাড়ি করে। তার মধ্যে একটি মেয়ে সুমাইয়া পারভীনকে দেয়। অপরটি নিজে ব্যবহার করতে। মাস ছয়েক আগে মাহবুবার রহমান নওগা জেলার জনৈক মিজানুর রহমান নামের একজনকে ৩ কক্ষ ভাড়া দিয়ে ঢাকা সাভারের ইপিজেড এলাকায় জিলানী বাজারে চলে যায়। তবে সেখানে তিনি পলি থাই এন্ড গ্লাস নামের একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে বলে তার মেয়ে সুমাইয়া পারভীন পলি জানান। এদিকে ভাড়াটে মিজানুর রহমান তার স্ত্রী ও একটি কন্যা নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতো এবং নিজেকে সিএনজি অটো বিক্সা চালক বলে পরিচয় দিতো। ভাড়াটের সাথে দুই/তিন জন অজ্ঞাতনামা লোকজন মাঝে মধ্যে ওই বাড়ীতে যাতায়াত করতো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তারা আরও জানান, ওই ভাড়াটে মিজানুর রহমান গত ২/৩ দিন আগে স্ব পরিবারে চলে যায় এবং ওই ভাড়াটের বোনের স্বামীসহ অজ্ঞাতনামা দুইজন গত রোববার ওই ঘরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরনে মারা যায়। তবে বোমা বিস্ফোরনে নিহতের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দামুয়া গ্রামের কুদরুতুল্লাহ বলে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক শাহাবুদ্দিন, বগুড়ার অধিবায়ক আজমল হোসেন, পিবিআই, সিআইডি, ফায়ার সার্ভিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও জেলা ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দিতে গিয়ে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমান বিস্ফোরকদ্রব্য, পিস্তল, গুলি উদ্ধার পূর্বক গ্রেনেডগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। তবে জঙ্গি আস্তানা বা জঙ্গি সংগঠনের এহেন কর্মকান্ড কিনা তা তদন্ত না করে বলা যাবেনা। তাছাড়া যেকোন সংঘবদ্ধ চক্র হোকনা কেন তদন্ত অব্যাহত রয়েছে । খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top