ধাপে ধাপে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিচ্ছে ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন মানেই রক্তাক্ত ভোটকেন্দ্র। নির্বাচন মানেই ভোটারদের লাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। নির্বাচন মানেই সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে শিশু নিহত হওয়া। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বীর নেতা-কর্মীদের খুন করা। নির্বাচন মানেই বিরোধী প্রার্থীর স্বজনকে হত্যা করা। নির্বাচন মানেই প্রার্থীদের রক্তাক্ত করা। নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা। ইউনিয়ন পরিষদের দুই দফার নির্বাচনের এক মাসেই নিহত হন ৪২ জন। তা ছাড়া আহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত সংখ্যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হলেও নির্বিকার নির্বাচন কমিশনার। এত লাশের উপর দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়ে ভোটাদের নির্বাচন বিমুখ করাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। : ৫ জানুয়ারি ভোটরবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। ক্ষমতা দখল করেই জয়গণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচন থেকে শুরু হয় ভোটকেন্দ্র থেকে ভোটারদের বিতারিত করা। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের বিতাড়িত করে ভোট ডাকাতি, ভোট কারাচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই। নির্বাচনের জয় হতে বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রচারণায় মাঠে নামতে না দেয়া থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকৌশল নেই যা করেনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। ধীরে ধীরে নির্বাচন থেকে জনগণকে দূরে সরিয়ে দিতেই আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। পৌরসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসের নতুন মাত্রায় নিয়ে যায় ক্ষমতাসীনরা। বিরোধী প্রার্থীদের নমিনেশনপত্র পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি। সেই সাথে শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচন মাঠ থেকে বিতাড়িত করা। রেকর্ডসংখ্যক আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হওয়া। কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই পৌরসভা নির্বাচন শেষ করা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে শুরু হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সন্ত্রীদের লাশের নির্বাচন। নির্বাচনের সংহিসতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় দুই দফা ইউপি নির্বাচনে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী দুই দফা ইউপি নির্বাচনের এক মাসেই নিহত হন ৩৭ জন। তা ছাড়া আহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত শুক্রবার অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সহিংসতায় গত এক মাসে ৩৭ জন নিহত ও অন্তত ২ হাজার ১২৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৬ জনই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকালীন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌর নির্বাচনে একজন নিহত হয়েছেন এই সময়ে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা, তাদের উপর হামলা এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। সরকারকে অবিলম্বে আলোচনার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে বলা হয় প্রতিবেদনে। : প্রথম দফার ইউপি নির্বাচনের দিনই নিহত হয়েছেন ১২ জন। পিরোজপুরের ধানিসাপায় পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মারা যান ৬ জন। এ ছাড়া টেনাফের সাবরাং ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশ-বিজিবির ত্রিমুখী সংঘর্ষে আরো মারা যান ২ জন। আবার নেত্রোকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি ইউনিয়নে আবু কাউসার নামে আরেকজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে কুমিল্লার দেবীদ্বারে ভোট গ্রহণের সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় এক কিশোর ও ঝালকাঠি সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। : গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের দিন নিহত হন ১১ জন। নির্বাচনে সহিংসতায় জামালপুর, যশোর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, মাদারীপুর, নাটোর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে শিশু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। : চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া ইউপি নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় এক পুলিশ কনস্টেবলসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। মাদারীপুরের সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ বিরাঙ্গল গ্রামে ভোট গণনার সময় দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সংঘর্ষে সুজন মৃধা নামের যুবক (২৫) নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশের গুলিতে সুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। : যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র দুর্বৃত্তরা দখলের চেষ্টা করলে পুলিশের গুলি ও দুর্বৃত্তদের বোমার আঘাতে কেন্দ্রের বাইরে থাকা সাত্তার নামের এক ফেরিওয়ালা নিহত হন। : কেরানীগঞ্জ উপজেলার হজরতপুরের মধুরচর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শুভ নামের এক স্কুলছাত্র। : জামালপুরের মেলানদহের শেরপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুরচর কেন্দ্রের বাইরে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে রফিকুল ইসলাম নামের একজন নিহত হয়েছেন। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের হাবিবপুর ভোটকেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষে আহত যুবক বিপ্লব রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। গত রাত ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। : মানিকগঞ্জে দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নামেছা বেগম (৩৮) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো চারজন আহত হন। গতকাল শনিবার নির্বাচনের সংহিসতায় নিহত হয় দুজন। যশোরে মারা গেছেন ইকবাল হোসনে আর মাদারীপুর মারা গেছেন হাসান বেপারী। শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের দিয়াপাড়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হাসান বেপারী শনিবার ভোরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। – See more at: http://www.dailydinkal.net/2016/04/03/24382.php#sthash.sr4D0bb5.dpuf
Share!