একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝেই আবারো দু’টি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। নিজেদের পূর্ব উপকূলে নিক্ষেপ করা এই অস্ত্র দু’টি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এ নিয়ে চলতি মাসে ষষ্ঠ বারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। এর আগে দেশটি কৌশলগত একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর উচ্চ গতির দু’টি ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র’ এবং ট্রেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া ফের দু’টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে সিউল শনাক্ত করেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী হামহাং এলাকা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি নিক্ষেপ করা হয়।
দক্ষিণ কোরীয় জেসিএস আরও জানিয়েছে, নিক্ষেপের পর ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি প্রায় ১৯০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে এবং এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ২০ কিলোমিটার।
এদিকে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নোবোউ কিশি সাংবাদিকদের বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোনের ঠিক বাইরে এসে পড়ে।
এছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যেকোনো ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা ‘খুবই নিন্দনীয়’ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার বিরোধী। উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত ৫ জানুয়ারি বছরের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হিসেবে পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটি নিজের পূর্ব উপকূলে হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটি দ্বিতীয়বারের মতো শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে।
এরপর গত ১৪ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়া ফের অজ্ঞাত মিসাইল নিক্ষেপ করে বলে জানায় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কর্মকর্তারা। এক সপ্তাহেরও বেশি কিছু সময়ের মধ্যে সেটি ছিল পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির তৃতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। আর এর তিনদিনের মাথায় নিজের পূর্ব উপকূলে একসঙ্গে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেশটি।
এরপর গত ২৫ জানুয়ারি সমুদ্রে দু’টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। চলতি মাসে সেটি ছিল দেশটির পঞ্চম দফায় চালানো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা।
এছাড়া গত বছরের অক্টোবর মাসের শুরুতে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর আগে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালায় দেশটি। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে পৃথকভাবে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোরও অভিযোগ ওঠে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে।
উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।