আমার দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা গত মাসে ডুবে যায়। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে এসময়। বৃষ্টিপাত এখনও চলছে। দেড় মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি এসময় বাস্তুচ্যুত হয়। কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমি বন্যায় ভেসে গেছে। ফলে লাখ লাখ মানুষের জন্য এ বছর খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হবে।
গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ব্যাপক ক্ষতির পরেই আসে বন্যা। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস। হায়, বিপদ কখনও একা আসে না। এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় আমাদের। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবু নির্ভার হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প ও রফতানি আয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমাদের কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই এখন বেকার।
বিশ্বের সকল জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মতো, বাংলাদেশও জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে এবং অর্থনৈতিক ধাক্কা কাটাতে চেষ্টা করছে।
অন্যান্য দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের তুলনায় কম হতে পারে। তবে তারা এর ভয়াবহ প্রভাব থেকে বেশিদিন মুক্ত থাকতে পারবে না। তাই আমাদের লড়াই নিবিড়ভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারীরা তাদের অঞ্চল ছাড়তে বাধ্য হবে। বিশ্ব মহল কি এই বিপর্যয় এড়াতে সময় মতো কাজ করবে?
জলবায়ু সংকট ও কোভিড-১৯ উভয়ই বৈশ্বিক হুমকি। ঝুঁকি হ্রাস করতে আমাদের আরও অনেক কিছু করণীয় ছিল। তবে এখনও এ সমস্যা বিদ্যমান। তাই আন্তর্জাতিকভাবে সমস্যা রোধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা ব্যতীত বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়।
টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০ অনুসারে, আফ্রিকার ৪৩ টি দেশ এবং এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার আরও অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল এখনও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। অথচ জলবায়ু সমস্যা সমাধানে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও অগ্রণী জলবায়ু গবেষণা প্রয়োজন। এছাড়া সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এটা প্রমাণিত যে, আরও স্থিতিশীল, কার্যকর ও প্রতিযোগীতামূলক অর্থনীতি গড়ার উপায় হচ্ছে কার্বণ নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস করা। এতে আমরা সকলেই উপকৃত হব।
জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধে বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এই মুহূর্তে কোনও দেশেরই অন্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া উচিত নয়। বিপর্যয় এড়াতে প্রত্যেক দেশকে আরও ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করতে হবে। এছাড়া বিশ্বের সমষ্টিগত অস্ত্বিত্বে প্রভাব ফেলে এমন সমস্যাগুলি মোকাবেলার ব্যাপারেও আশার সঞ্চার করতে হবে