রোমাঞ্চের ঢেউ লেগেছে ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের ভক্তদের মনে। লাগারই কথা। তারা শুনেছে, বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আসছেন ম্যানচেস্টারের নীল শিবিরে যোগ দিতে। পেপ গার্দিওলা-লিও মেসি রোমান্সে ইউরোপসেরা ক্লাব হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ম্যান সিটি সমর্থক গোষ্ঠী।
এটা ঠিক ‘এমএলটেনের’ পায়ের জাদুতে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ‘নীল’ জোয়ার বইবে। একটা সিটও আর ফাঁকা থাকবে না গ্যালারির। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়েও হয়তোবা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যাবে ম্যান সিটি। তাদের আয় বাড়বে। কিন্তু মেসির উপস্থিতিতে ম্যান সিটির পারফরম্যান্সে সত্যিই কি বড় কোনো পরিবর্তন আসবে? বৃটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান মনে করে, মেসির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে ম্যানচেস্টার সিটির।
পেপ গার্দিওলার দলের মূল সমস্যা তো আক্রমণভাগ নয়, রক্ষণভাগই তাদের মাথাব্যথার কারণ।
অস্বীকার করার জো নেই পেপ গার্দিওলা বিশ্বসেরা কোচদের একজন। উপভোগ্য ফুটবল আর গোল দুটোই উপহার দিতে জানেন এই স্প্যানিয়ার্ড। ২০০৮ সালে বার্সেলোনার কোচ হওয়ার পর কাতালান ক্লাবটিকে তিনি নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। তার অধীনে ২০০৯ ও ২০১১তে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে ‘ব্লুগ্রানারা’। গার্দিওলার ইউরোপ জয়ের মিশনে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন লিওনেল মেসি। তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণ সময় ছিল তখন। মাঠে একের পর এক গোল করেছেন। গার্দিওলা নতুন ক্লাবে যোগ দেয়ার আগেই মেসির ব্যালন ডি অর হয়ে যায় ৪টি। এরপর আরো দুটো ব্যালন ডি অর এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন মেসি। কিন্তু গার্দিওলা আটকে আছে সেই দুয়েই। বার্সা অধ্যায় শেষে বায়ার্ন মিউনিখে তিন এবং বর্তমান ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে চার বছর পেরিয়ে গেছে; একটিবারও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে যেতে পারেননি। লীগ পর্যায়ে অবশ্য সাফল্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে তার। বায়ার্নের হয়ে তিনটি ও ম্যান সিটির হয়ে জিতেছেন দুটি লীগ শিরোপা। যেসব খেলোয়াড় রয়েছে ভান্ডারে তাদের নিয়েই আগামী মৌসুমে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন গার্দিওলা, মেসিকে প্রয়োজন হবে না। মেসিকে কেনার মূল উদ্দেশ্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়।
কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে মেসিকে আনলে খুব একটা উপকার হবে না ম্যানচেস্টার সিটির। হতে পারে তিনি বিশ্বসেরা ড্রিবলার, যেকোনো মুহূর্তে পাল্টে দিতে পারেন ম্যাচের চিত্র। কিন্তু বয়স একটা ফ্যাক্ট। ৩৩ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইনের ক্ষীপ্রতা দিন দিন কমছে। ২০০৯-১০ সালের দিকে লা লিগায় ম্যাচপ্রতি মেসির বল রিগেইন রেট ছিল ২.১। সেটি ২০১১-১২তে নেমে আসে ১.২-এ। গার্দিওলার বিদায়ের পর ফিগারটা কখনো ১-এর উপরে ওঠেনি।
ম্যান সিটির আক্রমণভাগের বল রেগেইন রেট কিন্তু মেসির চেয়েও ভালো। রিয়াদ মাহরেজ, বারনার্দো সিলভা ও রাহিম স্টারলিং তিনজনের ম্যাচ প্রতি গড় রেট ১.৪। গত মৌসুমে সিটির রাইট উইংগার মাহরেজের বল রিগেইন রেট ছিল ১.৩, বারনার্দো সিলভার একটু বেশি- ১.৮। ২০১৯-২০ প্রিমিয়ার লীগে সবচেয়ে বেশি গোলও (১০২) ম্যানচেস্টার সিটির। ৩৮ ম্যাচের মধ্যে ১১টিতে চার কিংবা ততোধিক গোল করেছে ক্লাবটি। মেসি এলে প্রতিপক্ষকে হয়তো আরো বেশি গোল দেবে ম্যান সিটি। কিন্তু প্রতিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাকে তাদের যে দুর্বলতা, সেটা কাটবে কীভাবে? আক্রমণভাগের চেয়ে এখন রক্ষণেই বেশি জোর দেয়া উচিত গার্দিওলার।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে লিঁওর কাছে কাউন্টার অ্যাটাকে ধরাশায়ী হয় ম্যান সিটি। এটি গার্দিওলার পুরনো সমস্যা। বার্সেলোনার সর্বজয়ী দলের হয়ে ২০১২ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালে চেলসির বিপক্ষে ৩ গোল হজম করেন গার্দিওলা। সবগুলোই ছিল কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। একইভাবে ২০১০ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালেও হোসে মরিনহোর ইন্টার মিলানের কাছে ট্যাকটিকসে হেরে যান গার্দিওলা। ম্যান সিটির হয়ে কিছুদিন পর পঞ্চম মৌসুম শুরু করবেন তিনি। মেসি আসুক কিংবা না আসুক কাউন্টার অ্যাটাক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে গার্দিওলার।
Share!