Friday , 1 November 2024
সংবাদ শিরোনাম

১৭ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

এর আগে ইন্সটিটিউটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে এমপি আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সভা হয়।

পরে ব্রিফিংয়ে কামাল নাসের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে ১৭ মার্চের উদ্বোধনী আয়োজনটি কীভাবে হবে, তার একটি ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘সারা দেশে একটা নির্দিষ্ট সময়ে, একটা বিশেষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আমরা আয়োজন করব। সেটি সব টেলিভিশনের মাধ্যমে ও আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে সম্প্রচারিত হবে এবং একই সঙ্গে সারা পৃথিবীতে।’

এদিকে বিদেশি অতিথিদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে অপর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘চলতি মাসের ১৭ তারিখেই হবে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান। বড় গণজমায়েত না হলেও অনুষ্ঠানে নতুনত্ব আনা হয়েছে। তবে ওইদিনের অনুষ্ঠান ভিডিও’র মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। আর বছরব্যাপী অনুষ্ঠান চলবে।

সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরবর্তী সময়ে আমাদের বড় অনুষ্ঠানের চিন্তা রয়েছে।’ ইন্সটিটিউটে ‘মুজিববর্ষ বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক উপকমিটির’ সভা শেষে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

কামাল নাসের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য দেড় থেকে দুই ঘণ্টার টেলিভিশন অনুষ্ঠান হবে জানিয়ে কামাল চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেটাকে মোটামুটি একটা অবস্থায় রেখে চিন্তা করেছি। ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের দেড় থেকে দুই ঘণ্টার একটা টিভি প্রোগ্রাম তৈরি করা হবে।

সেটা পরবর্তীকালে সারা দেশে এবং সারা পৃথিবীতে সম্প্রচার হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রোগ্রামের মধ্যে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত আছে। আমাদের রাষ্ট্রপতি বাণী দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সেখানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন, তারপর তার কবিতা পাঠ আছে।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে মুজিববর্ষ উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান ঠিক হয়েছিল। এখন মূল ওই অনুষ্ঠান স্থগিত করে জনসমাগম এড়িয়ে এই কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রচার রাতে হবে জানিয়ে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ সেটি হচ্ছে রাত ৮টায়।

রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর যে জন্মক্ষণ সেই জন্মক্ষণে আতশবাজি ও আনন্দ আয়োজনমূলক প্রোগ্রামের মাধ্যমে উদযাপন করব। সে আলোকে প্রোগ্রামটা কোন সময়টাতে শুরু হবে, সেটা ঠিক করব। তবে রাতে প্রোগ্রামটা হবে। সময়টাকে এখন ডিজাইন করব।’ এক প্রশ্নে কামাল চৌধুরী বলেন, ‘এটা রেকর্ডেডও হতে পারে, আবার কিছু অংশ লাইভও হতে পারে।

এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের টেকনিক্যাল টিম আছে, অ্যাটকো ও বাংলাদেশ টেলিভিশন আছে, তারা কাজ করছে। সাংস্কৃতিক উপকমিটিসহ যারা আছে সংশ্লিষ্ট আছেন, তারা কাজ করছেন।’

কামাল চৌধুরী জানান, জাতীয় শিশু দিবসে এই আয়োজনে শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও শিশুদের কণ্ঠে অন্য সঙ্গীত পরিবেশনা থাকবে। একশ জন দেশীয় শিল্পীর যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের জন্য থিম সং বা উৎসব সঙ্গীত পরিবেশিত হবে অনুষ্ঠানে। উদ্বোধনী আয়োজনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, অবদান ও ত্যাগের মহিমা নিয়ে ‘চিত্রপটের দৃশ্যকাব্যে বঙ্গবন্ধু’ নামে থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফির আয়োজন থাকবে বলে জানান কামাল চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘জীবনকর্ম নিয়ে থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফির মতো থাকবে। এটা একটা সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম আকারে তৈরি করা হয়েছে। সেটা শিল্পকলা একাডেমি পরিবেশন করবে।

‘এই আয়োজনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ব্রিটিশ কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের দলের পারফর্ম করার কথা। তাদের রিহার্সাল চলছে এখন। আকরাম খানের যে পারফরম্যান্স সেটাও কিন্তু এখানে পরিবেশন করা হবে।’ সবার জন্য উপভোগ্য আয়োজনের পরিকল্পনা জাতীয় কমিটি করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটাকে যাতে সবাই মিলে উপভোগ করতে পারেন, তাদের গৃহে কিংবা যেখানে থাকুন না কেন, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াগুলো এবং টেলিভিশন ও অন্যান্য মাধ্যমে যাতে উপভোগ করতে পারেন। প্রত্যেকটা জিনিস এমনভাবে ডিজাইন করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ ফিল করে, তারা এই বড় আয়োজনে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু আসতে পারেননি, তারা যাতে না ভাবেন- আমরা সম্পৃক্ত হতে পারলাম না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকা ২২ ও ২৩ মার্চ সংসদের বিশেষ অধিবেশন, ২০ মার্চ শিশুদের সঙ্গীত, ২৬ ও ২৭ মার্চ অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠান হবে, তবে সবগুলোই জনসমাগম এড়িয়ে করা হবে। অনুষ্ঠানে থাকবে রক্তদান, মিলাদ মাহফিল, রাষ্ট্রপতির বাণী, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, শেখ রেহানার শুভেচ্ছা বক্তব্য। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা চেয়েছিলেন মুজিব শতবর্ষ উদযাপন হোক, ভক্ত হিসেবে আমরাও চেয়েছিলাম। তাছাড়া মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান একদিনের জন্য নয়, এটা বছরব্যাপী অনুষ্ঠান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা জানিয়েছেন, আমরা খুব ভাগ্যবান বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ায় বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ এসেছে। তারা নিশ্চয়ই চান বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান হোক। যেহেতু এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাই বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিষয়টি কমিটির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়েছে, ইউএনসহ অন্যান্য সংস্থা অনেক অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় দেশ সফর সীমিত করেছে। এছাড়া আমরা ছয়টি দেশের (চীন, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড) ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখছি। সেসব দেশে থেকে আমাদের দেশে আসতে মেডিকেল টেস্ট করার কথা বলেছি। জরুরি না হলে দেশে আসতে অন্যান্য দেশের বসবাসরতদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা স্থগিত করা হচ্ছে, বাতিল নয়। সময় বুঝে মুজিববর্ষ উদযাপনের সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া দেশের বাইরে থাকা সব সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, প্রবাসী, রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এমপি আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এসএম হারুন-অর-রশীদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি ও একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু এবং কমিটির অন্য সদস্যরা।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top