টানা তিন দশকের বেশি সময় মিসর শাসন করেছেন স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হামলার তিনিই ছিলেন পরিকল্পনাকারী।
আরব বসন্তের ধাক্কায় ২০১১ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে মোবারকের ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। পুরো আরব বিশ্ব কাঁপিয়ে তোলা ওই গণ-অভ্যুত্থানে গদি হারানো নেতাদের মধ্যে মোবারকই প্রথম, যাকে নানা অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
বিবিসি জানায়, মিসরের উত্তরাঞ্চলে কাফর আল মেসেলহায় ১৯২৮ সালের ৪ঠা মে জন্ম নেয়া হোসনি মোবারক নিজেও সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন।
দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মোবারক ১৯৪৯ সালে মিসরের মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। পরে ১৯৫০ সালে বিমান বাহিনীতে বদলি হয়ে কমিশন প্রাপ্ত হন।
১৯৭২ সালে দায়িত্ব লাভ করেন বিমান বাহিনী প্রধানের। মূলত বিমান বাহিনী প্রধান ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক ডেপুটি মিনিস্টার হওয়ার পরই তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হামলার তিনিই ছিলেন পরিকল্পনাকারী। পরে ১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানান।
১৯৮১ সালে আনোয়ার সাদাত সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হন এবং এ ঘটনায় হোসনি মোবারকও আহত হন।
আনোয়ার সাদাত নিহত হওয়ার পর মিসরের প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন হোসনি মোবারক। টানা তিন দশকের বেশি সময় তিনি মিসর শাসন করেন।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ১৮ দিনের গণবিপ্লবে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হন মোবারক। বিপ্লবের দিনগুলোতে তার নির্দেশে ২৩৯ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
বিক্ষোভকারী হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে ২০১২ সালে নিম্ন আদালত হোসনি মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুইবার উচ্চ আদালতে আপিল করেন মোবারক।
বিপ্লবের দিনগুলোতে নিহতদের স্বজনরা আপিল আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা ওই গণহত্যার জন্য মোবারকের পাশাপাশি বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আস-সিসিরও বিচার দাবি করেছেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিসি ওই সময় (হোসনি মোবারক শাসনামলে) সেনা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন।
সরকারি তহবিল তসরুফের অভিযোগে এরই মধ্যে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছেন হোসনি মোবারক।
সাবেক এই একনায়কের বিরুদ্ধে বিপ্লব-পরবর্তী দিনগুলোতে আরও বহু অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেসব অভিযোগের প্রায় সবগুলোতে তিনি নিজের শাসনামলে স্থাপিত বিচার বিভাগের কাছ থেকে বেকসুর খালাস পান।