ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার সহিংসতার তৃতীয় রাতেও বেশীরভাগ ঘটনায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আহত হয়েছেন অসংখ্য নাগরিক।
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চলমান ঘটনাবলীকে গত এক দশকের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সহিংসতা হয়েছে। সংঘর্ষকারীদের কারও কারও হাতে বন্দুক দেখা গেছে। এসব এলাকার সড়কগুলো এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো রূপ নিয়েছে, রাস্তায় পুড়ছে যানবাহন, উড়ছে ধোঁয়া।
মুসলমান বিক্ষোভকারীদের ওপর ভারী কুঠার, লোহার রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হিন্দুত্ববাদীরা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো প্রাণঘাতী এই সহিংসতায় ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর তারা পাথর নিক্ষেপ ও গুলিও করেন।
বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী অন্তত দুটি মসজিদে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে দেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা কোরআনের বিভিন্ন পাতা মাটিতে পুঁতে রাখতে দেখা গেছে লোকজনকে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকালে ৫০০ জনের মতো একদল হিন্দু আশক নগর এলাকায় একটি মসজিদের দরজা ভেঙে ফেলে ভেতরে ঢোকে। এরপর সেটির মিনারে উঠে হিন্দুত্ববাদী পতাকা টানিয়ে দেয়। তারা মসজিদটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরবর্তী সন্ধ্যায় আরেকটি ছোট মসজিদ ও মুসলমানদের দোকানে আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুসলমান বলেন, তারা তিন ঘণ্টা ধরে মসজিদটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এরপর হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়।
গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, বিকালে এসে মসজিদের ভেতরে যা ছিল সব পুড়িয়ে ফেলেছে। এরপর লুটপাট চালিয়েছে। মসজিদ লাগোয়া দোকানেও তারা আগুন দেয়। এরপর পাশের দুটি মুসলমানদের বাড়িতে চড়াও হয়।
বুধবার সকালেও মুসলমানদের বাড়ি-সম্পত্তিতে হামলা অব্যাহত রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও মুসলমানদের বাড়িঘর-মসজিদ সুরক্ষায় স্থানীয় হিন্দুদের টহল দিতেও দেখা গেছে।
উত্তরপূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, বাবরপুর, ব্রাহামপুর, গোরাখপার্ক, মৌজপুর, ভাজানপুরা, কবিরনগর, চান্দবাগ, গোকুলপুরি, কারওয়াল নগর, কাজুরিখাস ও কারদুমপুরেও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভ উসকে দিতে পারে এমন বক্তব্য না দিতে রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার পর বিজেপি নেতা বিএল সান্তোস বলেন, খেলা এখনই শুরু হবে। ভারতের আইন কী, তা তাদের শেখাতে হবে।