নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের ‘পাপের সাম্রাজ্যে’র বাসিন্দা কে বা কারা রয়েছে তা জানতে মাঠে নেমেছেন র্যাবের গোয়েন্দারা। তরুণীদের দিয়ে অভিজাত হোটেলে দেহ ব্যবসায় পাপিয়ার ‘কাস্টমার’ ছিলেন কারা সেগুলোও খোঁজা হচ্ছে। এ ছাড়াও তাদের অবৈধ সম্পদ এবং নরসিংদীতে গড়ে তোলা নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের শনাক্তেও কাজ করছে র্যাব। এরই মধ্যে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বিশেষ ক্ষমতা আইন, অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক তিন মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে পাপিয়া ও তার স্বামী সমুন চৌধুরীকে। অপরদিকে জাল টাকা উদ্ধার মামলায় তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তাইবা নূরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা পৃথক পৃথক মহানগর হাকিম শুনানি শেষে এসব আদেশ প্রদান করেন। এদিন বেলা দেড়টার কিছু আগে পাপিয়াসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে রিমান্ড বিষয়ক শুনানি শুরু হয়। এ সময় পাপিয়াকে দেখতে আদালতে ভিড় করেন বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উৎসুক জনতাও।
তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, পাপিয়াসহ চার আসামি সংঘবদ্ধভাবে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখল, অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বৈদেশিক মুদ্রার উৎস ও জাল টাকা তৈরি চক্রের সক্রিয় সদস্যসহ মূলহোতাকে গ্রেফতার ও ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর একান্ত আবশ্যক।
শুনানির শুরুতে বিমানবন্দর থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ মামলায় শামিমা নূর পাপিয়াসহ চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে তাপস কুমার পাল, আজাদ রহমান, হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ রিমান্ড মঞ্জুরের জন্য প্রার্থনা করে শুনানি করেন।
অপরদিকে আসামি পক্ষে রিমান্ডের আবেদন বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর, কলিম মৃধা, কামাল হোসেনসহ কয়েকজন। শুনানিতে তারা বলেন, আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ আছে। ৪৮ ঘণ্টা পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইনবহির্ভূতভাবে তাদের রেখে দিয়েছে। তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তাছাড়া বলা হচ্ছে, মেয়েদের নিয়ে ব্যবসা করার কথা। কোনো মেয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। এসব নাটক ছাড়া আর কিছু না। আসামিদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। মূলত রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই আসামিদের রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন দেওয়া যেতে পারে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মাসুদ উর রহমান জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় করা অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলার বিষয়ে শুনানি হয়। এ দুই মামলায় শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সুধাংশু সরকার। প্রথমে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ড বিষয়ক শুনানি শুরু হয় অপর মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করা হয়। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের আবেদন বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম জামিনের আবেদন নাকচ করে দুই মামলায় পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত গত ২২ ফেব্রæয়ারি দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২৩ ফেব্রæয়ারি সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়।
‘পাপের সাম্রাজ্যে’ চলছে অনুসন্ধান
Share!