লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রহণের পাশাপাশি তারা পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টির অবতারণ করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
এরপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকলেও সরকার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। তাই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। এক্ষেত্রে মাদক কারবারিদের মতো দু’এক জনের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে যাওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আলোচনার সূত্রপাত করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এত সুদক্ষ একটি মন্ত্রিসভা, তার দু’জন মন্ত্রী এখানে আছেন। তাদের অনুরোধ করতে চাই। পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে গেছে। জনগণের মধ্যে একটা রিঅ্যাকশন হচ্ছে। আজকে পর্যন্ত যে খবর আছে প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে পেঁয়াজের কেজি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা এত জনপ্রিয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। কী কারণে প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম? বাণিজ্যমন্ত্রী যখন সংসদে বলেন ১০০ টাকার নিচে নামবে না, তখন তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। তাই অনুরোধ করব প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করছেন বলেছেন। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? ব্যাপারটা বোধগম্য না। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করবেন না। পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মানুষের মধ্যে রিঅ্যাকশন খারাপ হবে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দাম একটু বেড়েছে। একটু না আজকে পত্রিকায় দেখলাম ২০০ টাকা কেজি। এটা কোনো দিন আমরা ভাবি নাই। বর্ষার কারণে ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়নি। সাধারণত এগুলো আমরা আগেই মূল্যায়ন করি। আমাদের বাৎসরিক চাহিদা কত আছে। আর যেটা ঘাটতি সেটা আগেই তুরস্ক বা মিশরসহ মিয়ানমার থেকে আগেই আমদানি করার ব্যবস্থা করি। টিসিবি সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রীকে বলব- যারা পেঁয়াজ আমদানি করে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের যখন কোনো একটা পণ্যের দাম বাড়ে, আমরা তার ওপর ডিউটি কমিয়ে দেই। আমি মনে করি এই মুহূর্তে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য অন্তত কিছু দিনের জন্য পেঁয়াজের ডিউটি শূন্য করে দেন।
অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমি যখন শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন লবণের দাম বেড়েছিল। তখন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে অনুরোধ করার পর লবণ আমদানি ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছিলেন। এই খবর পরিবেশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরকম একটা ঘোষণা দেন ‘পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক বা ডিউটি লাগবে না’, তাহলে দেখবেন এর একটা প্রভাব পড়বে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলেই বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। প্রধানমন্ত্রী এর আগে অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজ কম খেতে। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিবাজরা এটা করতে পারে। এটা মানা যায় না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমি আহ্বান জানাই। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে পেঁয়াজের দাম কমে। মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুইদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে। একথা বলার পরদিনই পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে গেল। এখন দুইশ টাকা কেজি। নিউজে দেখলাম পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় ভারতের কৃষকরা কাদঁছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সর্ম্পক। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিতেন, তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা থাকত না।
তিনি আরও বলেন, বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। তারপরেও দাম বাড়ছে। এখন একটি অভিযান চালানো দরকার। তাহলে এই সমস্যাটা আর থাকবে না।
চুন্নু বলেন, মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে। পরে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। যারা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের একজন মারা যাক না, এমনি বন্দুকযুদ্ধে।
চুন্নু আরও বলেন, আমি মনে করি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। এটা দেখা দরকার। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দরকার।
সরকারি দলের সদস্যদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ছোট বেলায় আমরা বিস্কুট দৌড় খেলতাম। দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বিস্কুট ধরতাম। এখন পেঁয়াজ নিয়ে সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই মূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।