বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে আজও উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রথমে মৌন মিছিল এবং শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ১০ দফা দাবি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে আজও উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাস।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রথমে মৌন মিছিল এবং শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে ধরা হয়েছে নতুন ১০ দফা দাবি।
নতুন করে ১০ দফা দাবিগুলো হলো-
১. আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুসারে শনাক্ত খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।
৩. মামলার সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিস জারি করতে হবে।
৪. দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ামত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের তথ্য দিতে হবে।
৫. আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের কপি অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে।
৬. বুয়েটে ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ‘ত্রাসের রাজনীতি’ কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে যাননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছেন, কোন তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন, তাকে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।
৮. আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে।
৯. আগে ঘটা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে তথ্য প্রকাশের জন্য একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কোনো ওয়েবসাইট বা ফর্ম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুই পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্ৰ উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভাস্টকে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সদ্য স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাহাদ। এরপর গত রোববার রাত ৮টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নেয়া হয় তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (সপ্তদশ ব্যাচ) শিক্ষার্থী আবরারকে। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে হলে ফিরেছিলেন। এরপর রাত ২টার দিকে হলের সিঁড়িতে আবরারের লাশ পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে সোমবারই বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ সংগঠনটির ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।