আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলকে ঘিরে পদপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এরই মধ্যে লবিং, তদবির শুরু হয়ে গেছে। তবে দলটির প্রধান রয়েছেন কঠোর অবস্থানে। খোঁজখবর নিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে। কাউন্সিলের তারিখ ঠিক হওয়ার পর থেকে নরম সুরে কথা বলছেন পদপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা। ২১তম কাউন্সিলের জন্য আজ উপকমিটি গঠন করা হবে। সেজন্য সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এমনটাই মানবকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সে হিসেবে আগামী অক্টোবরের ২৩ তারিখে শেষ হচ্ছে ত্রিবার্ষিক কমিটির মেয়াদ। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় কমিটি নিয়ে বাণিজ্য হলেও এবার একটি অভিযোগও যেন না আসে সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নির্দেশনা দিয়েছেন তৃণমূলে। কোনো বিতর্কিত নেতা যেন কমিটিতে স্থান না পান এবং বিগত সময়ে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে নির্ভুলভাবে দেয়ার জন্যও তাগিদ দেয়া হয়েছে।
জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকে পদপ্রত্যাশীদের আচরণে কিছুটা নমনীতা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য সময় তৃণমূলকে গুরুত্ব না দিলেও এখন দিচ্ছেন। পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রের চেয়ে তৃণমূলে বেশি সময় দিচ্ছেন। তৃণমূলকে গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগের তুলনায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্যরা ভিড়ছেন বেশি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার জন্য নেতাদের সাথে সালাম বিনিময় করছেন অনেক তৃণমূল নেতা।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য গতকাল বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পরই উপকমিটি ঘোষণা করা হয়। এখন থেকে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছি।
সূত্রে আরো জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গত শনিবার গণভবনে শেখ হাসিনা বলেন, গত তিন বছরের মধ্যে মাত্র একবার দলের সম্মেলন হয়েছে তাও একটি জেলায়। এ নিয়ে তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধও হয়েছেন। আপনারা কী করেন? নির্বাচনের পর মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে কেন? বাকি জেলাগুলোতে কেন সম্মেলন হলো না? আপনাদের প্রত্যেকের আমলনামা আমার গোচরে রয়েছে। অনেক নেতা শুধু জেলায় জেলায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আসেন, তারা দলের কোনো কাজই করেন না। কোনো নেতার নিজস্ব অপকর্ম ও দুর্নীতির দায় সরকার এবং দল কোনোভাবেই নেবে না। এ বিষয়ে সবার প্রতি জিরো টলারেন্স থাকবে।
তবে গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পছন্দেই পদ বণ্টন হয়। তিনি যাকে যে পদে মনোনয়ন দেবেন সব কাউন্সিলর তাকে মেনে নেবেন, এবারো তাই হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দলের প্রধানের মাইন্ড সেটের ওপর সবাই ছেড়ে দেয়। তার নির্দেশনায় দল চলবে। প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে, তবে নেত্রীর ইচ্ছার বাইরে কিছু হয় না। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। সবারই এমন পদ কাক্সিক্ষত। তিনি আস্থা রেখে দলের সাধারণ সম্পাদকের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পেয়ে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ এ পদের ইচ্ছা সবার থাকে। এটা বিরাট সম্মানের বিষয়।
দ্বিতীয়বারের মতো আবার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তা নির্ভর করছে নেত্রীর ওপর। তিনি চাইলে আরেকবার দায়িত্ব পালন করব। তিনি যদি থাকতে বলেন থাকব, না বললে থাকব না। যদি নতুন মুখ নিয়ে আসেন স্বাগত জানাব।
জাতীয় সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোয় একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনৈতিক অভিযোগের বিরুদ্ধে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যুবলীগকেও শেষবারের মতো সাবধান করে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের ট্রাইব্যুনাল চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিতর্কিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী দৌড়ঝাঁপ চলছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন করার জন্য এবং প্রতিটি শাখা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সিনিয়র নেতারাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার বাইরে যাবেন। এই উপলক্ষে আগামীকাল (আজ) সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় আরো কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সম্মেলনের জন্য উপ-কমিটি গঠন করা হবে।
সম্প্রতি নিজেদের বিতর্কমুক্ত করতে তাঁতী লীগ তাদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের তিনজন নেতাকে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। গত রোববার তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেছার আহম্মেদ, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ছবি পদদলিত করা এবং কমিটি বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের ভেতরে যত বড় নেতাই হোক না কেন অপকর্ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।