নৃশংস নির্যাতনের ফলে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের প্রত্যাবর্তন শুরুর জন্য এ মাসের গোড়ার দিকে নতুন পরিকল্পনা নেয় মিয়ানমার সরকার। প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য এটা ছিল দ্বিতীয় প্রচেষ্টা। এর আগে প্রথমবার গত নভেম্বরে চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এবার বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে প্রায় ৩০০০ রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে মিয়ানমার সরকার। দৃশ্যত এই প্রস্তাব স্বেচ্ছায় কোনো রোহিঙ্গা গ্রহণ করেনি। পরিবর্তে তারা বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ফিরে গেছেন অথবা পালিয়ে ছিলেন।রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাইবে না, এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ নৃশংসতার মাত্র দু’বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গার বসবাস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে।ওই রাজ্যটিতে এখনও সহিংসতা রয়েছে এবং তা একটি অস্থিতিশীল স্থানে পরিণত হয়েছে।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে জাতিগত রাখাইন আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করছে সেনাবাহিনী। জবাবে প্রচলিত ভয়াবহ কৌশল অবলম্বন করছে সেনারা। এই লড়াইয়ে বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সেনারা হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস। এ বিষয়ে আরো রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা দাবি করেছে, রাখাইনে জাতিগত রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।ওদিকে মিয়ানমার সরকার যখন রোহিঙ্গাদের বলছে যে, তারা নিরাপত্তার সঙ্গে ফিরে যেতে পারেন, ঠিক তখনই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য তারা প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ, আস্থা অর্জনের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করেনি। রাখাইনে এখনও যে সহিংসতা চলমান তা নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পক্ষে কোনো শক্তিশালী সংকেত দেয় না। রোহিঙ্গাদের অবমাননা এবং তাদেরকে এখনও মিয়ানমারে অবৈধ হিসেবে অব্যাহতভাবে অভিহিত করছেন মিয়ানমার সরকারের সিনিয়র নেতারা। মানবাধিকার বিষয়ক ও অনুসন্ধানী গ্রুপ ফোর্টিফাই রাইটস রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিতে ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করে যাচ্ছে। এ সপ্তাহে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা। ফোর্টিফাই রাইটস দেখতে পেয়েছে যে, এখনও দেশের ভিতরে বসবাস করছেন যেসব রোহিঙ্গা তাদেরকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড গ্রহণ করতে অব্যাহতভাবে শক্তি প্রয়োগ করে বাধ্য করছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এই ভেরিফিকেশন কার্ডে তাদেরকে ‘বিদেশী’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের নাগরিকত্বের অধিকারকে অস্বীকার করা হয়। যেসব রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবর্তনের তালিকায় ছিল অথবা যাদের নিজদেশে তাদের জীবন নতুন করে সাজানোর কথা ছিল তাদের সঙ্গে দৃশ্যত শলাপরামর্শ করেনি মিয়ানমার ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন দেখতে পেয়েছে যে, যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করতেন সেই এলাকাগুলোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে সমান করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি, অবকাঠামো অথবা সামাজিক সেবার জন্য কোনো প্রস্তুতি ন্যাপিড গ্রহণ করেইনি বলা যায়।পক্ষান্তরে, রোহিঙ্গাদের দখলে থাকা জমিগুলোতে ডেভলপমেন্ট কাজ করছে মিয়ানমারের কোম্পানিগুলো। আগস্টের শুরুর দিকে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলো রাখাইন রাজ্যের প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করছে। বর্তমানে ওই রাজ্যে জাতিগত বিন্যাস ঢেলে সাজানোর জন্য এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির প্রমাণ মুছে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী হলে কি ঘটবে?
Share!