নড়াইলের ইকরাম হোসেন (৪০)। ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরিবার-পরিজন থাকেন গ্রামের বাড়িতে। কয়েকদিন আগে তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন। কিন্তু ঢাকায় তার দেখাশোনার কেউ নেই। তাই বুধবার রাতে জ্বর নিয়েই চেপে বসেন নড়াইলের বাসে। বাড়ির পথে রওনা দিয়ে পাশের যাত্রী ও বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেছেন, দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়েও। কিন্তু আজ ভোরে কালনা ফেরিঘাটে পৌঁছে আর সাড়া মেলেনি তার। প্রথমে মনে হয়েছে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই ঘুমই যে তার শেষ ঘুম, তা কেই-বা জানতো? ডেকেও যখন তার ঘুম ভাঙেনি, তখন গায়ে হাত দেয়া হয় ইকরামের। আর সেসময়ই জানা যায় তিনি আর নেই। কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় বাসের অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ইকরাম হোসেন নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানীতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করতেন এবং একাই থাকতেন। তার স্ত্রী, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকে।
মৃত ইকরাম হোসেনের চাচাতো ভাই কবির হোসেন জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে দেখাশোনার কেউ না থাকায় তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় বুধবার রাতে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে হানিফ পরিবহনে উঠেন।
হানিফ পরিবহনের নড়াইল শহরের রূপগঞ্জ কাউন্টারের ম্যানেজার আকবর মন্ডল বলেন, ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত ওই যাত্রী দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পরও কথা বলেছেন। কিন্তু কালনা ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যান্য যাত্রীরা তার গায়ে হাত দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন।
নড়াইল সদর থানার ওসি (তদন্ত) হরিদাস রায় বলেন, সংবাদ শোনার পর মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তার সঙ্গে কিছু ওষুধ, আনারস ও মোবাইলসহ ব্যাগ ছিল। পরিবারের সদস্যদের কোন আপত্তি না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।