দুই বাংলার খ্যাতিমান মনিপুরী নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর মেয়ে সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ বিশেষ সম্মাননা পেলেন কলকাতায়।
সম্প্রতি কলকাতার মহানায়ক উত্তম মঞ্চে বসেছিল দুই বাংলার মিলনমেলা। অনুষ্ঠানে প্রয়াস সন্মাননা-২০১৯ এ অভিষিক্ত হন শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। ভারতের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী অভিরূপ সেনগুপ্ত’র নৃত্যসংগঠন আদ্যকলা তীর্থম এবং প্রয়াস যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে তাথৈকে প্রদান করা হয় চারটি সন্মাননা: ইউনিভার্সিটি মেডাল (গোল্ড), নিরদ বরণ মেমরিয়াল প্রাইজ, সুনীত বসু মেমোরিয়াল প্রাইজ ও অসীত চট্টোপাধ্যায় মেমোরিয়াল প্রাইজ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা, পরিচালক রেশমী মিত্রা ও ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমত্র পাউল।
বাংলাদেশের মেয়ে তাথৈ কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে অসামান্য সাফল্য পেয়েছেন। তিনি ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টির সাতটি নৃত্য বিভাগের সব শিক্ষার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এবার এমএ (নৃত্য) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তুখোড় এই নৃত্যশিল্পী ভারত সরকারের আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্র ভারতীতে পড়তে যান। মনিপুরী ও ভরত নাট্যম দুই ঘরানার নাচেই তাথৈ সমসাময়িক নৃত্যশিল্পীদের, বলা যায়, ছাড়িয়ে গেছেন।
শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় বলে থাকেন, নাচ আমার জীবনের প্রথম সন্তান, আর তাথৈ আমার কাছে দ্বিতীয় সন্তান। আমি কাউকেই ছোট-বড় হিসেবে প্রাধান্য দেই নি। বরং দুটো সন্তান আমার কাছে একই রকম সমান। এই দুই সন্তানকে নিয়ে সঙ্গে নিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন; উচ্চাঙ্গ নৃত্যের পরিবেশনা দিয়ে কাঁপাচ্ছেন মঞ্চও।
এই দুজন যখন মঞ্চে ওঠেন তখন আর সম্পর্ক মা-মেয়ের থাকে না। দুই শিল্পী উচ্চাঙ্গ নৃত্যের নিপুণ মুদ্রায় মন্ত্রমুগ্ধ করেন দর্শকদের।
শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় ছায়ানটের নৃত্য বিভাগের শিক্ষক এবং নৃত্যবিদ্যালয় নৃত্য নন্দনের পরিচালক। বর্তমানে তাথৈও প্রতিষ্ঠান দুটিতে শিক্ষক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতের মনিপুরী নৃত্যগুরু বিম্বাবতী দেবির সাহচর্যে তাথৈ নিজেকে বর্তমানে ঋদ্ধ করছেন আরো। তাঁর আরেকটি পরিচয় হচ্ছে- তিনি অভিনয় শিল্পী। ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রে তাথৈ অনবদ্য অভিনয় করেছেন।
ক্লাসিক্যাল নাচের পাশাপাশি আধুনিক ধারার নাচেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এক্ষেত্রে তিনি উচ্চাঙ্গ নৃত্যের মুদ্রা ও আধুনিকতার মিশেল ঘটিয়ে থাকেন। তাথৈ কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এই সময়ের দর্শকরা এই সংমিশ্রণকে খুব ভালোভাবে নিচ্ছে।
মায়ের আঙুল ধরেই নাচের জগতে তাথৈয়ের প্রবেশ। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই একইসঙ্গে তাথৈয়ের গুরু আর মমতাময়ী মা। অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্যে এলেও মা শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সেরা গুরুর আসনটি দিয়ে থাকেন মেয়ে তাথৈ এবং মায়ের মতোই সংস্কৃতি চর্চাকেই জীবনের আরাধ্য করতে চান।