Friday , 1 November 2024
সংবাদ শিরোনাম

নিজের পারফর্মেন্স নিয়ে মুস্তাফিজের মূল্যায়ন

গত চার বছরের পরিসংখ্যানের বিচারে বর্তমান বাংলাদেশের সেরা বোলার তিনি। এমনকি সেরা উইকেট শিকারীও বটে। ২০১৫ সালে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের অভিষেকের পর থেকেই ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন। কাটারের পারদর্শিতার জন্য ‘কাটার মাস্টার’ বলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার কাটারের শিকার হয় ক্রিকেটের সব বড় বড় ব্যাটসম্যানরা। আর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলে তার বোলিং নৈপুণ্যে মুস্তাফিজ পরিচিয় হয়ে ওঠেন ‘ফিজ’ নামে।

ক্যারিয়ারের এই চার বছরে মুস্তাফিজ খেলেছেন ৪৬টি ওয়ানডে ম্যাচ। ওভার প্রতি গড়ে ৪.৮৮ করে মোট রান দিয়েছেন ১,৮৪৯। তার বোলিং স্ট্রাইক রেটও ২৭.৩। তিন বার করে তিনি পাঁচ উইকেট এবং চার উইকেট শিকার করেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালের পর থেকে মাত্র ৪৬টি ম্যাচে যত উইকেট শিকার করেছেন, মাশরাফী, সাকিব বা রুবেলরা তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেও সেটি পারেননি। তার চেয়ে ১৯ ম্যাচ বেশি খেলে একটি উইকেট কম পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

সাকিব আল হাসান খেলেছেন ১১ ম্যাচ বেশি। কিন্তু মুস্তাফিজের চেয়ে ১৬টি উইকেট কম পেয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করার পর ইনজুরিতে পড়ে নিজের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন মুস্তাফিজ। এরপর থেকে ছন্দে ফিরতে বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই তরুণ পেসার।

নিজের ব্যাপারে মুস্তাফিজের মূল্যায়ন :

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যেমন দ্যুতি ছড়িয়েছেন, তেমনি খারাপ দিনও কাটিয়েছেন মুস্তাফিজ। তার পারফরম্যান্স নিয়ে যেমন প্রশংসায় ভেসেছেন, তেমনি বাজে বোলিং এর জন্য তার পারফরম্যান্সেরও কাটাছেঁড়া হয়। এসব বিষয় সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘শুরুর দিনগুলোতে আমার বল বুঝতে ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন ছিল। যত দিন গড়িয়েছে ততই সহজ হয়ে গিয়েছে আমার কাটার।’

চলতি বছরের নিউজিল্যান্ড সফরের শেষ ও আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুটা বেশ বাজে হয় মুস্তাফিজের। প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ২৬১ – আর মুস্তাফিজ একাই ১০ ওভার বল করে দিয়েছেন ৮৪ রান। তবে দুটো উইকেট নিয়েছেন তিনি।মুস্তাফিজের এর ঠিক আগের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ছিল নিউজিল্যান্ড সিরিজে – যেখানে তিনি রান দিয়েছেন ৯৩।

তবে বেশ কিছুদিন পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিলেও ঠিক পরের ম্যাচেই একই দলের বিপক্ষে (আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে) একেবারেই ম্লান মুস্তাফিজ। ৫ ওভার বল করে দিয়েছিলেন ৫০ রান। কোন উইকেট ও পাননি।ফলে খুব দ্রুতই প্রশ্ন উঠে গেছে, অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত বলে বিবেচিত এই বোলারের ঠিক কী হলো?

২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স

২০১৬ সালে চোট পান মুস্তাফিজ, যার ফলে ১৬-১৭ মৌসুমে তার উইকেট সংখ্যা ও গড়ে প্রভাব পড়ে। আর ইনজুরির পরে মুস্তাফিজ মূলত দেশের বাইরে বেশি খেলেছেন। সেটিকেও একটি বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি, ‘নতুন একজন বোলার এলে তার সম্পর্কে অনেকে জানে না। এখন আমার সম্পর্কে অনেকে জানে। আগে বেশিরভাগ সময় আমার বোলিংয়ে ক্যাচ হয়ে যেত। এখনও হয় মারতে গেলে। আগে মারতে না গেলেও উইকেট পেতাম। আর শুরুতে আমি দেশে খেলেছি। দেশের উইকেট হলে আগের মুস্তাফিজই পাওয়া যেত। ওখানে বল ঘুরে। আর ইনজুরির পর বিদেশে বেশি খেলেছি।’

‘আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেনা না মুস্তাফিজ’

বাংলাদেশের সাবেক একজন পেস বোলার হাসিবুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘শেষ ম্যাচে যেমন বোলিং করেছে সেটা চিন্তা করলে ইংল্যান্ডে ভালো খেলাটা কঠিন, আগের ম্যাচে যেমন খেলেছে সেটায় মনেই হচ্ছিলো যে মুস্তাফিজ ছন্দে ফিরেছে। এখনো খুব সম্ভবত মুস্তাফিজুর রহমান আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না, ফিট না থাকলে তো আর বোলিংয়ে আসতো না, তাই আত্মবিশ্বাসটাই এখন মূল কারণ মনে হচ্ছে।’

ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে মুস্তাফিজুর রহমানের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট দল সাসেক্সের হয়ে মুস্তাফিজ চারটি উইকেট নিয়েছিলেন, কিন্তু ইনজুরির কারণে খুব বেশি খেলতে পারেননি তিনি। এর আগেও বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ইংলিশ কন্ডিশনে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং অভিজ্ঞতা রয়েছে।

শান্ত বলেন, ‘মুস্তাফিজ এমন একজন বোলার যার ছন্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কন্ডিশনে, ছন্দ খুঁজে পেলে সে প্রায় যে কোনো ব্যাটসম্যানকেই খাবি খাওয়াতে সক্ষম। এমন সময়ে ইংল্যান্ডে দলের সমন্বয় ও তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top