সোমবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মিয়াজী শহিদুল আলম চৌধুরী সাত খুনের এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন যুগান্তরকে জানান, সাত খুনের ২টি মামলাসহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মিয়াজী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে আরো ৭টি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত সাত খুনের ২টি মামলায় ২৭ জানুয়ারি ও ৫টি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র শুনানির (চার্জ গঠন) দিন ধার্য করেন। ৮টি মামলার মধ্যে ৩টি মাদক, ২টি চাঁদাবাজি ২টি সাত খুনের ও ১টি অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে।
এদিকে, নূর হোসেনের ৫ সহযোগীর (চার্চিল, আলী হোসেন, রহম আলী, মিজানুর ও বাশার) জামিন আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করেন। এছাড়া তারেক সাঈদের পক্ষে সারোয়ার মিয়াসহ ৫ আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
নূর হোসেনের পক্ষে প্রথম আইনজীবী খোকন সাহা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২০১৪ সালের ১২ জুন সাইদুল ইসলাম নামে এক অটোরিকশা চালক নূর হোসেন ও তার ভাতিজা শাহজালাল বাদলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত নূর উদ্দিন ও লোকমান পলাতক রয়েছে। আর নূর হোসেন হাজতে এবং আপোস মিমাংসায় বাদীর জিম্মায় বাদল জামিন পেয়েছেন। আদালতে বাদলের জামিন স্থায়ীকরণের জন্য আবেদন করা হলে আদালত আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন বর্ধিত করেছেন। আইনজীবী খোকন শাহা নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে সকাল ৯টায় নূর হোসেনকে কাশিমপুর কারাগার থেকে পুলিশ প্রহরায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে চাঁদাবাজির একটি মামলায় হাজির করা হয়। এছাড়া র্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ ছাড়া ২২ জনকে সাত খুনের দুটি মামলায় জজ কোর্টে হাজির করা হয়।
অপরদিকে আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেখতে সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বাস, ট্রাকে এসেছিলেন অন্তত ৫ শতাধিক ক্যাডার। ৮টি মামলার শুনানি শেষে বেলা ১১টায় কারাগারে নেয়ার পথে লিংক রোডে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান ক্যাডাররা। বিপুল সংখ্যাক ক্যাডার বাহিনীর সরব উপস্থিতি দেখে এক মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী নাসিক কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি আতংকিত হয়ে পড়েন।
এসময় আদালতপাড়ায় বিউটি সাংবাদিকদের জানান, সাত খুনের পূর্বে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে নূর হোসেন যেমন দুর্ধর্ষ ছিলেন আজ তার ক্যাডার বাহিনীর উপস্থিতি দেখে তেমনি দুর্ধর্ষই আছেন বলে মনে হলো। এতে আমি নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছি। যেকোন সময় নূরের সন্ত্রাসীরা আমার ও আমার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। আমি নূরের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা চাই।
কোর্ট পুলিশের এসআই শওকত আলী যুগান্তরকে জানান, এজলাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকার পরও দুই হাতের হাত কড়া পড়িয়ে কাঠগড়ায় উঠানোর পর আদালতের নির্দেশে নূর হোসেনের এক হাতের হাত কড়া ও মাথায় পড়া হ্যালমেট খুলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নাসিক প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন, স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১এর বিপদগামী সদস্যরা। পরে ৩০শে এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
দুটি মামলায় এ পর্যন্ত র্যাবের ১৭ সদস্যসহ মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ র্যাবের ১৯ জন সদস্য রয়েছেন।
এ ঘটনার ১১ মাস পর গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুটি মামলায় অভিন্ন চার্জশিটে নূর হোসেন, চাকরিচ্যুত সাবেক র্যাব কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তাদের মধ্যে ২৩জন গ্রেফতার রয়েছে। বাকি ১২ জন এখনো পলাতক।