শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪৫ জনই শিশু যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জায়ান চৌধুরী।
দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, গতরাতে আরো ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত রবিবার শ্রীলঙ্কার তিন গির্জা ও তিন হোটেলসহ আটটি স্থানে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় নিহতের পাশাপাশি আহত হয় অন্তত ৫০০ জন। এর মধ্য দিয়ে এক দশক আগে তামিল বিদ্রোহের অবসান ঘটানোর পর থেকে দেশটি সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হলো।
এদিকে, বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের মুখপত্র আমাক নিউজ অ্যাজেন্সি বলেছে, গত রবিবার শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে তাদের যোদ্ধারা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নিজেদের সংবাদ সংস্থা ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’তে জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শ্রীলঙ্কার এই কাজ ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের ছিল।’ তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি সংগঠনটি।
গতকাল শ্রীলঙ্কাজুড়ে এক দিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়। সব ভবনে জাতীয় পতাকা ছিল অর্ধনমিত। নিহতদের মধ্যে গতকাল অনেকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহেকে ফোন করে সহমর্মিতা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। হামলায় গ্রেপ্তারদের পরিচয় জানানো হয়নি। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শাংরি লা এবং সিনামোন গ্র্যান্ড হোটেলে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছিল দুই সহোদর। তাদের বাবা কলম্বোর শীর্ষ মসলা ব্যবসায়ীদের একজন। এই দুই ভাই এনটিজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল বলেও দাবি করেছেন এক সরকারি কর্মকর্তা।
সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রবিবার আরেকটি হোটেলেও আত্মঘাতী হামলার ছক ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হামলাটি হয়নি। হোটেলটির নাম প্রকাশ না করে এএফপি জানায়, ঘটনার আগের দিন এক ব্যক্তি সেখানে ওঠেন। রবিবার সকালে তিনি একটি অনুষ্ঠানস্থলেও ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি হামলা চালাননি। তবে কী কারণে তিনি হামলা থেকে বিরত থাকলেন, সে বিষয়ে এএফপির প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।
শ্রীলঙ্কার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে গতকাল দাবি করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুক হামলার প্রতিশোধ নিতেই আমাদের এখানে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি আরো দাবি করেন, ‘জামায়াতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার (জেএমআই) সঙ্গে এনটিজের যোগসাজশ রয়েছে।’ তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে হামলার প্রতিশোধ নিতে শ্রীলঙ্কায় হামলা হয়েছে—এমন কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
এদিকে, হামলার পর গতকাল রাতে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রথম অধিবেশন বসার কথা। সতর্ক থাকলে রবিবারের হামলা এড়ানো যেত কি না—অধিবেশনে তাই নিয়ে সবচেয়ে বেশি তর্ক-বিতর্ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।