ঘনিয়ে আসছে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। আগামী মাসের ৩০ তারিখেই বেজে উঠবে বিশ্বকাপের দামামা। দেড় মাসব্যাপূ এই আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে খেলাটির মক্কা খ্যাত লর্ডসে। টুর্নামেন্টের মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসের ১১টি ভেন্যুতে। বিশ্বকাপে মেতে ওঠার আগে জেনে নিন ভেন্যুগুলো সম্পর্কে। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক স্টেডিয়ামগুলোর নাম, অবস্থান এবং দর্শক ধারণক্ষমতা।
০১. এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, বার্মিংহাম, ধারণক্ষমতা- ২৫ হাজার
০২. কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল, ধারণক্ষমতা- ১৭ হাজার
০৩. রিভার্সাইড গ্রাউন্ড, চেস্টার লি, ধারণক্ষমতা- স্ট্রিট ২০ হাজার
০৪. হেডিংলি, লিডস, ধারণক্ষমতা- ১৭ হাজার ৫০০
০৫. লর্ডস, লন্ডন, ধারণক্ষমতা- ২৮ হাজার
০৬. ওভালো, লন্ডন, ধারণক্ষমতা- ২৩ হাজার ৫০০
০৭. ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার, ধারণক্ষমতা- ২২ হাজার
০৮. ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম, ধারণক্ষমতা- ১৭ হাজার
০৯. রোজ বোল, সাউদাম্পটন, ধারণক্ষমতা- ২৫ হাজার
১০. কাউন্টি গ্রাউন্ড, টনটন, ধারণক্ষমতা- ৮ হাজার ৫০০
১১. কাডিফ ওয়েলস, কার্ডিফ, ধারণক্ষমতা- ১৫ হাজার ৬৪৩
ট্রেন্ট ব্রিজ: নটিংহ্যাম কাউন্টি ক্লাবের নিজস্ব মাঠটি ১৮৪১ সালে উদ্বোধন করা হয়। ট্রেন্ট ব্রিজ সত্যিকারার্থেই একটি ঐতিহাসিক ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯৭৪ সালে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯১৯ বিশ্বকাপে এই মাঠে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানসহ মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ট্রেন্ট ব্রিজের এই মাঠে বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের রেকর্ড বেশ ভালো।
এই ভেন্যুতে ১৯৭৫ আসরে নিউজিল্যান্ড এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ী হয়েছিল ইংলিশরা। সম্প্রতি এই মাঠে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬ উইকেটে ৪৮১ রানের রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। আ্যালেক্স হেলস ও জনি বেয়ারস্টো উভয়েই সেঞ্চুরি করেন। ২০১৬ সালে এই মাঠেই ৩ উইকেটে ৪৪৪ রানের পূর্বেকার রেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড।
রিভার্সাইড ডারহাম: ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কাউন্টি ক্লাব ডাহামের এই নিজস্ব মাঠটি। ইতিপূর্বে ১৯৯৯ আইসিসি বিশ্বকাপে এই মাঠে ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড – নিউজিল্যান্ডসহ মোট তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপে এই মাঠে সর্বোচ্চ সংগ্রহ পাকিস্তানের ২৬১/৬। যে ইনিংসের মাধ্যমে ১৯৯৯ আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী হয়েছিল পাকিস্তান। ম্যাচে ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার ও আব্দুল রাজ্জাকের সমন্বয়ে গড়া তারকা খচিত বোলিং আক্রমণ বিভাগের সকলেই তিনটি করে উইকেট শিকার করেছিল।
ওভালো : ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনের ওভালো গ্রাউন্ড। স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার আসরের উদ্বোধনী ম্যাচসহ ২০১৯ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মাঠে। কাউন্টি ক্লাব সারের নিজস্ব এই মাঠ থেকে ঐতিহাসিক টেমস নদীর দূরত্ব ঢিল ছোড়া। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটাই ছিল প্রথম টেস্ট ভেন্যু। ১৮৮০ সালে যে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। সেই থেকে এই পর্যন্ত এই মাঠে একশ টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মাঠে এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মোট দশটি ম্যাচে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওভালোতে সর্বশেষ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেছিলেন পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাক।
ওল্ড ট্রাফোর্ড : ম্যানচেস্টারের বিখ্যাত মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৫৭ সাল। কাউন্টি ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারের নিজম্ব এই ভেন্যুতে ২০১৯ বিশ্বকাপে একটি সেমিফাইনালসহ মোট ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটিও। এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও ব্যবহৃত হয়েছে বড় এই মাঠে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ড দুই বার বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছে। ১৯৭৯ আসরে নিউজিল্যান্ডকে ৯ রানে পরাজিত করেছেন। তবে ১৯৮৩ আসরে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে পরাজিত হয়েছে।
ইংল্যান্ডে এটা দ্বিতীয় পুরাতন টেস্ট ভেন্যু। এখানে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। অতি সম্প্রতি ‘জেমস এন্ডারসন এন্ড’ নামে প্যাভিলিয়ন প্রান্তের নামকরণ করা হয়েছে । টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী জেমস এন্ডারসনের নামে নতুন এই নামকরণ করা হয়।
লর্ডস : ‘ক্রিকেটের মক্কা’ বলে খ্যাত এই মাঠে আসন্ন বিশ্বকাপে ১৪ জুলাই ফাইনালের আগে গ্রুপ পর্বে চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৮৮৪ সালে এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ আসরের ফাইনালসহ লর্ডসে আইসিসি বিশ্বকাপের মোট ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ লর্ডসের এই মাঠেই। বিশ্বকাপের প্রথম আসর ১৯৭৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৩৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড।
হেডিংলি : ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হেডিংলি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এর আগে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ আসরের পর এই গ্রীষ্মে হেডিংলিতে আবারও বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়োরের ঐতিহাসিক এই মাঠে ২০১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জয় করা ওয়েস্ট ইন্ডিজও খেলবে হেডিংলির এই মাঠে।
হ্যাম্পশায়ার বোল : সাউদাম্পটনের এই স্টেডিয়ামটি খুব একটা পুরনো নয়। নির্মিত হয়েছে ২০০১ সালে। হ্যাম্পশায়ার বোলে ২০১৯ আসরেই প্রথমবারের মত হ্যাম্পশায়ারে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এই মাঠে গ্রুপ পর্বের মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তবে হ্যাম্পশায়াওে এর আগে ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালেও বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সে সময় সে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাউদাম্পটনের নর্দল্যান্ডস রোড গ্রাউন্ডে।
কাউন্টি ক্লাব হ্যাম্পশায়ারের নিজস্ব এই মাঠটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ তীরবর্তী সাউদাম্পটনে অবস্থিত এই মাঠটি। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ওয়ানডে দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এই মাঠে ক্রিকেটের তিন ফর্মেটেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৪ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পাঁচটি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয় এই ভেন্যুতে।
এজবাস্ট: বার্মিহামের কাউন্টি দল ওয়ার উইকশায়ারের নিজস্ব এই মাঠে একটি সেমিফাইনাল এবং ইংল্যান্ড-ভারতসহ বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কোন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার অপরাজিত ৫০১ রানসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত রয়েছে। এর আগের চারটি বিশ্বকাপের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এজবাস্টনে। এছাড়া ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৭৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হাই প্রোফাইল ইংল্যান্ড-ভারত ও একটি সেমিফাইনালসহ ২০১৯ বিশ্বকাপে এখানে পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। নিঃসন্দেহে ওয়ানডে ক্রিকেটে এই যাবতকালের সেরা হিসেবে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচটি ক্রিকেট ভক্তরা স্মরণে রাখবে। ব্যাট করছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড এবং ল্যান্স ক্লুজনার। এমন অবস্থায় উভয় দলের স্কোর ছিল সমান। অর্থাৎ ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
কাউন্টি গ্রাউন্ড টনন : ১৮৮২ সালে নির্মিত কাউন্টি ক্লাব সমারসেটের নিজস্ব এই মাঠে আসন্ন আইসিসি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। নিজস্ব ইতিহাস ও চরিত্রের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত কাউন্টি গ্রাউন্ড টনটন। ১৮৮২ সাল থেকেই এই মাঠ ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে একটি এবং ১৯৯৯ আসওে দুইটি ম্যাচে এখানে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ আইসিসি নারী বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এই ভেন্যুতে।
কার্ডিফ : ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠে কাউন্টি ক্লাব গ্লামোরগানের নিজস্ব এই মাঠে ২০১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গত দুই আসর এবং ১৯৯৯বিশ্বকাপেও এই ভেন্যুতে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মাঠে প্রথম কাউন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। এরপর ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে এটি প্রথম আন্তর্জাতিক ভেন্যুও স্বীকৃতি লাভ করে।
ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড : ১৮৮৯ প্রতিষ্ঠিত কাউন্টি ক্লাব গ্লস্টারশায়ারের নিজস্ব এই মাঠে ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮৩ ও ১৯৯৯ সালের পর দ্বিতীয়বার এখানে পুরুষ বিশ্বকাপ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ডে ২০১৭ আইসিসি নারী বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।