আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে কারও মৃত্যু হলে সেটা দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে না। সেটাকে হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তখন এর বিচার হবে পেনাল কোডের ৩০২ ধারা মোতাবেক। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে হত্যা প্রমাণিত হলে আদালত ৩০২ ধারা মোতাবেক দোষীকে সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দিতে বাধ্য থাকবে।
আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ সড়ক : আইনের প্রয়োগ ও জনসচেতনতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, দুর্ঘটনা আর হত্যা কিন্তু এক জিনিস না। সেইটাই বুঝতে হবে। প্রত্যেক আইনের মধ্যে এটা লেখা প্রয়োজন পড়ে না যে, হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিতে হবে।
আইনের অগ্রগতি বিষয়ে মন্ত্রী জানান, গত বছর ‘সড়ক ও পরিবহন আইন-২০১৮’ আইন জাতীয় সংসদে পাস করেছে। আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, এখন বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই আইন কার্যকর করা হবে।
এসময় অনেকটা আক্ষেপ করে মন্ত্রী বলেন, একটা কথা এই আইনটা সমন্ধে আছে যে, এই আইনে মৃতুদণ্ড নাই।
আনিসুল হক বলেন, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধ, ১০৫ নম্বর ধারা। এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, মোটরযান চালনা সংক্রান্ত কোনো দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে তৎসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোডের এতৎ সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলিয়া গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, পেনাল কোডে সেকশন ৩০৪ এর ‘বি’-তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা জনিত মোটরযান চালনার কারণে সংগঠিত দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদেরকে একটা কথা বলি- এই পেনাল কোডের কথা কেন বললাম? যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তাহলে আইনের কথায় শাস্তি আসলেই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু আদালত যদি মনে করে, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন দিতে পারে।
তিনি বলেন, এখন আমরা যদি এরকম কোনো সড়ক দুর্ঘটনা দেখি যে, এখানে চালকের সম্পূর্ণভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় বিচার করতে তো কোনো বাধা নাই। কারণ, সেটা হত্যা। সেটা আর দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে না।
আনিসুল হক বলেন, দুর্ঘটনা আর হত্যা কিন্তু এক জিনিস না। সেইটাই বুঝতে হবে। প্রত্যেক আইনের মধ্যে এটা লেখা প্রয়োজন পড়ে না যে, হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিতে হবে। আমাদের সেই আইন আছে। প্রত্যেকটা দুর্ঘটনা বা ঘটনা, যে তথ্য বা যে গল্প, সেটাকে বিশ্লেষণ করে, বিবেচনা করে এবং তদন্ত করে যে তথ্যটা বেরিয়ে আসে, সেইখানে যদি প্রমাণিত হয় এটা হত্যা, তাহলে তো ৩০২ ধারা মতে তাকে শাস্তি দিতে হবে। এটাই আইনের কথা। এটাই আইন বলে। এটাই আদালতে প্রমাণ করলে আদালত শাস্তি দিতে বাধ্য।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, সমকালের উপ-সম্পাদক অজয় দাস গুপ্ত প্রমুখ।