জাতীয় তথ্য বাতায়নে পঞ্চগড় জেলার তেমন কোনো তথ্যই মিলছে না। তথ্যের মধ্যে মিলছে কেবল সরকারি বিভিন্ন দফতরে কর্মরতদের পরিচিতি। সেটিও সীমিত পরিসরে। তাও আবার অধিকাংশ সরকারি অফিসগুলো পরিচিতি তথ্যটিও হালনাগাদ করা নেই। চার/পাঁচ বছর আগে চলে যাওয়া কর্মকর্তার ছবি ও নম্বর এখনো দেখাচ্ছে সেখানে। তথ্য বাতায়নে পঞ্চগড়ের এই হাল সচেতন মহলে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর অদক্ষতার জন্যই জাতীয় তথ্য বাতায়নের মতো সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ কেবল নাম পরিচয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তথ্য বাতায়নের বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়সভাসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা হলেও সরকারি কর্মকর্তা যেন কুম্ভকর্ণ। যেমন ছিলো তেমনি রয়ে গেছে। তথ্য বাতায়ন ঘেটে পঞ্চগড়ের প্রয়োজনীয় তথ্য না পেয়ে অনেকেই শূন্য তথ্য দেখে বিস্মিত হয়েছে। তাই ধীরে ধীরে জাতীয় তথ্য বাতায়ন পঞ্চগড় জেলার ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই।
www.panchagarh.gov.bd এই ঠিকানায় ঢুকে দেখা যায়, কেবল জেলা প্রশাসনের পাতায় মোটামুটি তথ্য রয়েছে। জেলা তথ্য অধিদপ্তরের পাতায় গিয়ে কোনো তথ্যই মিলেনি। কেবল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছবি ছাড়া। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তারা নাকি বিভিন্নভাবে প্রদর্শন করে। কিন্তু তাদের তথ্য বাতায়নের পাতায় কোন কিছুই পাওয়া যায়নি। পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের পাতায় দেখা গেলো বছর খানিক আগের কর্মকর্তাদের ছবিসহ নাম পরিচয়। ফায়ার সার্ভিসের জরুরি নম্বরটাও সেখানে নেই। সেখানে দেয়া উপ-সহকারী পরিচালকের নম্বরে ফোন দিলে একেএম মোর্শেদ জানান, তিনি দু বছর আগে পঞ্চগড় থেকে নওগায় বদলি হয়েছেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের পাতায় গিয়ে দেখা যায় উপ-পরিচালক হিসেবে নাম ও ছবি রয়েছে গোলাম মোস্তফার। ওই নম্বরে ফোন দিলে তিনি জানান অনেক আগেই তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছে। বিটিসিএল এর সহকারী প্রকৌশলী রোকনুদ্দৌলা অন্যত্র বদলি হলেও তার ছবিই দেয়া আছে তাদের পাতায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের পাতায় উপ-পরিচালক হিসেবে নাম ও ছবি রয়েছে শামছুল হকের। যিনি ছয় মাস আগে রাজশাহীতে বদলি হয়েছেন। বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক রবিউল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক এএসএম কামরুল হাসান তিন বছর আগে পঞ্চগড়ে ছিলেন। কিন্তু তাদের পাতায় ওই কর্মকর্তাদের নাম ও ছবি এখনো দেখাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএমসহ অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন আগে বদলি হলেও তাদের নাম ছবি এখনো রয়ে গেছে পোর্টালে। এমনকি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল হোসেন পঞ্চগড় ছেড়েছেন ৩/৪ বছর আগে। তার নাম পরিচয় এখনো পোর্টালে রয়েই গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নামও বদলে গেছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সাবেক পিডিবি এখন নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড নামে পরিচিত। কিন্তু তাদের পাতা রয়ে গেছে তথ্যহীন পুরনো আদলেই। এমন অবস্থা আরও অনেক সরকারি কার্যালয়ের। উপজেলা অফিসগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। এ অবস্থার জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসীনতা ও অদক্ষতাকে দায়ী করছেন।
পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, আমি একাধিক বার তথ্য বাতায়নে প্রয়োজনীয় তথ্যের খোঁজ করে তথ্য না পেয়ে নিরাশ হয়েছি। সেখানে থাকা কর্মকর্তাদের নাম্বারে ফোন দিলে তারা জানায় অনেক আগেই তারা পঞ্চগড় ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তাই এখন আর তথ্য বাতায়নের পোর্টালে ঢুকা হয় না।
পঞ্চগড় জেলা শহরের ডোকরোপাড়া এলাকার সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমার মনে হয় সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে বেশ উদাসীন এবং অদক্ষ। দিন দিন দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের জেলার তথ্য বাতায়নে তথ্য নেই। জেলা প্রশাসনসহ অল্প কয়েকটি অফিসে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও অধিকাংশই তথ্য শূন্য। শুরুতে যেমন ছিলো এখন তেমনি আছে। তথ্যগুলো আপডেট করা হচ্ছে না।
পঞ্চগড় জেলা শহরের ইসলাম এলাকার রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, জাতীয় তথ্য বাতায়নে নাম পরিচয় ছাড়া কোন তথ্য নেই বললেই চলে। পোর্টালের এই অবস্থা যেই দেখবে তার কাছেই দৃষ্টিকটু লাগবে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এমন তথ্যহীন তথ্য বাতায়ন আমরা প্রত্যাশা করি না।
পঞ্চগড় জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খালেদ রাশেদুল হাসান খান বলেন, আমাদের অফিসে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ কর্মচারী নেই। তাই যা তথ্য দিতে হয় আমাদেরকেই দিতে হয়। এছাড়া আমাদের এখানে নেটের গতি নেই খুব কম। তাই কাজ করতে সমস্যা হয়। আগামীতে তথ্য বাতায়নে আরও বেশি তথ্য যোগ করার চেষ্টা করবো।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের পাতার তথ্য হয়তো আপডেট করা হয়নি। তাই পূর্বের কর্মকর্তার নাম ও ছবিই দেখাচ্ছে। তথ্যগুলো আপডেট করার ব্যবস্থা করা হবে।
নেসকোর পঞ্চগড় নির্বাহী প্রকৌশলী হাসনাত জামান বলেন, আমরা আমাদের তথ্যগুলো আপডেট করার চেষ্টা করছি।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা বার বার সবাইকে গুরুত্বের সাথে কাজ করতে বলে যাচ্ছি। কিন্তু তারা শুনছে না। এমনকি আমরা বলেছি যদি তাদের সমস্যা হয় তারা তথ্য দিলে আমরাই তা পোর্টালে পোস্ট করার ব্যবস্থা করবো। সব অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করে কিভাবে তথ্য বাতায়নটিকে আরও সমৃদ্ধ করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।