ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারী কথিত মাহাদির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মাহমুদ পলাশ (২৪)। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা সিমলা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছে পলাশের পরিবার। পলাশের ফেসবুক থেকে জানা যায় তাদের বিয়ে হয়েছে দেড় বছর আগে।
চিত্রনায়িকা সিমলা মাহাদি তথা পলাশের বাড়িতে ১ মাস স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসীরা কালের কণ্ঠের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। এছাড়াও স্ত্রী হিসেবে পলাশের বাড়িতে সিমলার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। একই দাবি করেছে পলাশের পরিবারও।
পলাশের পরিবার বলছে সিমলা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এই হিসেবেই সিমলা বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। এছাড়াও পলাশের আরো এক স্ত্রী বগুড়ায় রয়েছেন। ওই ঘরে এক পুত্র সন্তানও রয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
তবে মাহাদি’র ফেসবুকে সিমলাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পলাশ লিখেছেন, ‘এই হচ্ছে আমার বউ যে আমার হাজারো ভুলের মাঝে,আমাকে সহ্য করে পার করে দিলো ১ টি বছর,দোয়া করবেন যাতে সারাটা জীবন এই পাগলীটা আর আমি এক সাথে থেকে যেনো মরতে পারি,বউ অনেক ভালবাসি তোমায় আর কস্ট দেবোনা, শুভ বিবাহ বার্ষিকি আদরের পুতুল বউ আমার।’
তবে এ বিষয়ে সিমলার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সিমলার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের পেয়ার জাহানের ছেলে পলাশ। ২০১১ সালে স্থানীয় তাহিরপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি।
পলাশের বাবা ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরবে ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাবার দেওয়া টাকা-পয়সা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন পলাশ। এর মধ্যে নাচগান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়ান তিনি। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করেন বলে জানায় পরিবার।
একটা সময় বাসা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন পলাশ। বাড়িতে তেমন যেতেন না। মাঝে মধ্যে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি যেতেন।
পলাশের বাবা পি আর জাহান বলেন, গত ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসে পলাশ। সাধারণত বাড়িতে সে এত দিন থাকতো না। গত ২০-২৫ দিনে অনেকটা পাল্টে যায় সে। মসজিদে যাওয়া-আসা করে, এমনকি আজানও দিয়েছে।
তিনি জানান, গত শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তার মাকে বলে যায়- ভ্রমণ ভিসায় আমি দুবাই যাচ্ছি।তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে বাবাকে কিছু বলেননি পলাশ। পলাশের বাবা আরও জানান, প্রায় ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমলার সঙ্গে তাদের কথাও হয়।
তিনি বলেন, এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দু’বার আসে পলাশ ও সিমলা। দ্বিতীয়বার এসে পলাশ বলেছে- আমি সিমলাকে বিয়ে করেছি। সিমলাও বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পি আর জাহান বলেন, ‘আমি সিমলাকে তখন বলেছি- তোমার সঙ্গে বয়সের এত ব্যবধান, কীভাবে আমার ছেলেটাকে বিয়ে করেছো? যাহোক বিয়ে যেহেতু করেই ফেলেছো, আমার ছেলেটা যাতে ভালো হয়ে যায় একটু খেয়াল রেখো।’
তিনি জানান, পলাশের মা রেনু আক্তারের সঙ্গে এরপর তিন মাসের মতো সিমলার কথাবার্তা ও যোগাযোগ হয়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি। হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
পলাশের বাবা বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি বলেন, সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ রাতে তাদের বাসায় এসে একটি ছবি দেখিয়ে জানতে বলেন- এটা আপনার ছেলে কিনা। পরে দুবাই যাওয়ার বিষয়টি এবং ছবি মিলে যাওয়ায় পলাশের পরিচয় নিশ্চিত হই।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার সাতমাথা ভাইপাগলা মাজারের পাশে পলাশ ২০১৪ সালে মেঘলা নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামে একটি সন্তানও আছে। মেঘলা বগুড়ার স্থানীয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালের মেয়ে। তার বাবা বগুড়ায় আইন পেশায় জড়িত।