মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত রায়ে ৩টি (২,৬,১৬ নম্বর) অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও দুটি ( ৭,৮ নম্বর) অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এছাড়া ৩টি (১,৩,৪ নম্বর) অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গত ৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আপিলের রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলেন।গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এ আপিলের শুনানি শুরু হয়ে চলে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে ৩০ নভেম্বর নিজামীর আপিলের যুক্তিতর্ক শুরু করে ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করেন। ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত ৮টি অভিযোগের সাক্ষ্য-প্রমাণ বিষয়ে তিন কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এর বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এর আগে আপিল বিভাগ এক আদেশে ৩০ নভেম্বর, ১ ও ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য করে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এরপর যুক্তিখণ্ডনের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে দেয়া হয়। আপিল মামলাটির শুনানির শুরুতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ কার্যদিবস মামলার পেপার বুক উপস্থাপন করা হয়।রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল সীমাহীন অপরাধ। এ অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প সাজা নেই। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দিয়েছেন তা যেন বহালে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।আসামিপক্ষে যুক্তিতর্কের শুনানিতে নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ এনেছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রাষ্ট্রপক্ষ সেফহোমে সাক্ষীদের রেখে, তাদের শিখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করেছে। এসব শেখানো সাক্ষ্য কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, এতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। তিনি নিজামীর খালাস চেয়ে বলেন, তারপরও যদি কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, এর ভিত্তিতে যদি তাকে (নিজামী) দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে বয়স, স্বাস্থ্য ও ভালো ব্যবহার বিবেচনা করে যেন তাঁকে চরম দণ্ড দেয়া না হয়।নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন তিনি।৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পেশ করে তাতে ১৬৮টি কারণ উল্লেখ করে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এ আপিল দাখিল করেন। ১২১ পৃষ্ঠায় মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে। মূল আপিলে ১৬৮ টি গ্রাউন্ড পেশ করে দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়।
Share!