যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ। প্রতিদিন ঘুম ভাঙে গুলি-বোমার শব্দে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সে দেশে খেলাধূলারও কোনো পরিবেশ নেই। তাই নিজ দেশ ছেড়ে বছরের পর বছর ভারতের মাটিতে অনুশীলন করে চলছে ক্রিকেটে নবীনতম দলের নাম আফগানিস্তান। পেয়েছে টেস্ট মর্যাদা। দেরাদুনই হয়ে উঠেছে তাদের ‘হোম গ্রাউন্ড’। এত সমস্যা সামলে সেই আফগানিস্তান এখন ক্রিকেট বিশ্বের নবীন শক্তি। বিশেষ করে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে।
২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। ম্যাচটিতে তারা হেরেছিল। এরপর থেকে তাদের উন্নতির গ্রাফটা দেখলে চমকে যেতে হয়। এখন পর্যন্ত ৭০টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৪৮টিতে জয় পেয়েছে তারা। হেরেছে মাত্র ২২টিতে। শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে আফগানদের জয় নেই। সবচেয়ে বেশি জয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৪ ম্যাচে ১১টি।
আক্ষেপের বিষয় হলো, এই নবীন দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৩টিতেই জয় পেয়েছে! দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত বাংলাদেশ ৮৫ ম্যাচে জিতেছে মাত্র ২৬টিতে; হেরেছে ৫৭ ম্যাচ। আফগানদের জয়ের হার যেখানে ৬৮.৫৭, সেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৩১.৩২। কেনিয়া এবং নেপাল ছাড়া সবগুলো দলের বিপক্ষে অন্তত ১টি করে ম্যাচ হলেও হেরেছে। সবচেয়ে বেশি পরাজয় ভারতের বিপক্ষে; ৮ ম্যাচের সবকটিতেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ ম্যাচের দুটিতে জয় পেয়েছে।
গতকালই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রীতিমতো বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছে আফগানরা। হজরতুল্লাহ জাজাইয়ের সেঞ্চুরিতে ২৭৮ রানের পাহাড় গড়েছে আফগানিস্তান। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ স্কোরের বিশ্বরেকর্ড! তরুণ জাজাই খেলেছেন ৬২ বলে ১১টি চার এবং ১৬টি ছক্কায় অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংস। যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ৪২ বলে তিনি পৌঁছান তিন অংকে, যা টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দ্রুততম। ওপেনিং জুটিতে ২৩৬ রান তুলে সর্বোচ্চ জুটির বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন জাজাই আর উসমান ঘানি।
প্রশ্ন হলো নবীনতম একটি দেশ যুদ্ধ, ধ্বংস সামলে অন্য একটি দেশে থেকে ক্রিকেটে এতটা উন্নতি করছে কিন্তু বাংলাদেশ কেন পারছে না? টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর ব্যাটসম্যান উঠে আসছে না। যে দু-একজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে; তারা হয় হারিয়ে যাচ্ছে না হয় কোনো অপকর্ম করে শাস্তির মুখে পড়ছে। আফগানিস্তান দরিদ্র একটি দেশ; অন্যদিকে বিসিবি বিশ্বের চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড। এসব প্রশ্নের জবাব এখন খোঁজা উচিত। শিক্ষা নেওয়া উচিত র্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকা আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে।