পাম তো দূরের কথা সয়াবিন তেলের সাথে পরিচিত ছিল না ভোক্তারা। বাদাম তেল, সরিষার তেল, ঘি প্রভৃতি দিয়ে রান্নার কাজ হতো বাংলাদেশে। সময়ের পরিবর্তনে এসবের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে বিভিন্ন কারণে, এসবের স্থান অনেকটাই দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে পামওয়েল। আমাদের দেশে শুধু নয় বিশ্বের অনেক দেশেই পামওয়েল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সরকারি উদ্যোগে পাম গাছ থেকে তেল পাওয়ার জন্য ২০ লক্ষ পাম ওয়েল চারা রোপণ করা হয়েছিল দেশে। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সিলেট, দিনাজপুর, পাবত্য অঞ্চলে লাগানো হয় প্রচুর পামগাছ। কিন্তু যন্ত্রের অভাবে গাছ থেকে তেল প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এর কারণ ছিল বিদেশ থেকে আমদানীকৃত মেশিনের দাম ছিল অনেক বেশি। যা ছোট কৃষকের একার পক্ষে কেনা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আবার দেশের বাহির থেকে কোন মেশিন কেনা হলেও তা বাংলাদেশের কৃষকের উপযোগী ছিল না। এসব বিষয়কে মাথায় রেখে পামওয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আওয়াল। মঙ্গলবার কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের প্রিসিশন ল্যাবে কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব তথ্য জানান ওই উদ্ভাবক।
উদ্ভাবক বলেন, যন্ত্রটি আবিষ্কার করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। কারণ মেশিনের একটু এদিক সেদিক হলে তেল প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক সমস্যা হত। প্রথমে অটোক্যাডে মেশিনের ফ্রি ডিজাইন করেছি। মেশিনের জন্য ভালো মানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করেছি, যাতে মেশিনটি টেকসই হয়। সহজে যেন কৃষকরা এটি ব্যবহার করতে পারে সেটির দিকেও যথেষ্ট নজর ছিল। পামওয়েলের ব্যাঞ্চ কাটা থেকে ক্রুড ওয়েল তৈরি করতে যত কম সময় লাগে, ততই তেলের উৎপাদন বেশি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সময় উপযোগি মেশিনের অভাবে এটি করা যাচ্ছিল না। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতেন এমনকি এটি চাষের আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মেশিনটি আবিষ্কার হওয়ায় নতুনভাবে এ সুযোগ তৈরি হলো। এখন থেকে ছোট ছোট খামারীরা এটি ব্যবহার করে সুফল পাবেন। সারাদেশে এটি পৌঁছাতে পারলে বাহির থেকে পামওয়েল আমদানী তো বন্ধ হবেই এমনকি বিদেশেও রপ্তানীর সুযোগ তৈরি হবে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিত্যক্ত সমুদ্র অঞ্চলে ও পাবর্ত্য অঞ্চলের পরিত্যক্ত জমিতে পাম গাছ রোপন করা গেলে পামওয়েলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ বেকারের কর্মস্থানও হবে বলে মনে করেন এই উদ্ভাবক।
কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খান মো. হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার। কর্মশালার শেষে একটি মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন ফার্ম স্ট্রাকচার এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নূরুল হক, অধ্যাপক ড. মো. জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক ড. জাহিদা মঈন, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রায়হানুল ইসলাম, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আবদুল আওয়াল, অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা, অধ্যাপক ড. মো রোস্তম আলী, অধ্যাপক ড. এহসানুল কবীর, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো.হামিদুল ইসলাম, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আদহাম, অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান, ফুড টেকনোলোজি ও গ্রামীন শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.আব্দুল আলীম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইকবালসহ অনুষদের অনান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, অয়েল পাম ফলকে প্রক্রিয়াজাত করে দু’ধরণের তেল পাওয়া যায়। ফলটির মাংসল অংশ (মেসোকার্প) থেকে পাম। তেল আহরণ করা হয়, আর বীজ বা শাঁস থেকে পাওয়া যায় পাম কার্ণেল তেল। প্রতিটি ফল থেকে ৯ ভাগ পাম তেল ও ১ ভাগ পাম কার্ণেল তেল পাওয়া যায়। সংগৃহীত তাজা ফলকে দ্রুত কারখানায় নিয়ে ষ্টেরিলাইজ ও গুচ্ছবিহীন করার পর মাড়াই করে অপরিশোধিত তেল আহরণ করা হয়। চূড়ান্ত পরিশোধনের পর তেল খাদ্যে ব্যবহার উপযোগী স্বর্ণাভ তেলে পরিণত হয়। একটি সরল পৃথকীকরণ প্রক্রিয়ায় তরল পাম অলিন ও জমাট পাম স্টিয়ারিনকে পৃথক করা যায়। কোন দ্রাবক ছাড়াই শুধুমাত্র যান্ত্রিক ও ভৌত প্রক্রিয়ায় পাম তেল আহরণ করা হয় বলে পাম তেল একান্ত ভাবেই প্রাকৃতিক। মেশিনটি ক্রয় করতে চাইলে আগ্রহীরা (০১৭১০৯৮৭২৫৮) এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।