প্রয়োজনে দিনের যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ করা, স্কুল-কলেজের ফি’সহ যে কোনো ধরনের ফি দেয়া, ইউটিলিটি বিল দেয়া, রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া দেয়া, বাস ট্রেনের, সিনেমা হলের টিকেট কেনা, খাবারের অর্ডার দেয়া, অনলাইনভিত্তিক পণ্য কেনা বা বিক্রি করাসহ নানাবিধ সুবিধার কল্যাণে এমএফএস বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে সারাদেশে এমএফএসের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬৮ লাখ এবং প্রতিদিন এ মাধ্যমে প্রায় ৬৫ লাখ লেনদেন হয়। টাকার পরিমানে যা এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
বহুল ব্যবহৃত এই মোবাইল ওয়ালেট সেবা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতে অসাধু চক্র সক্রিয় আছে। অথচ কিছুটা সচেতন হলেই আমরা যার যার মোবাইল ওয়ালেট সুরক্ষিত রাখতে পারি।
# আমরা জানি যে, ডিজিটাল জগতে যত ধরনের অ্যাকাউন্ট তা সবই পিন বা পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। ডিজিটাল ওয়ালেটের ক্ষেত্রেও তাই। পিন নম্বরই আসলে ডিজিটাল ওয়ালেটের এর চাবি। ফলে চাবি অন্যের হাতে তুলে দিলে যেমন সিন্দুকও নিরাপদ নয় তেমনি পিন নম্বর অন্য কাউকে জানিয়ে দিলে মোবাইল ওয়ালেটও নিরাপদ থাকবে না।
একটি মাত্র পদক্ষেপ নিয়েই অনেকাংশে মোবাইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখা সম্ভব। আর তা হলো পিন বা গোপন নম্বর কাউকে না জানানো। মোবাইল ওয়ালেট লেনদেন যন্ত্র নির্ভর লেনদেন। পিন নম্বর ছাড়া কোনভাবেই এ লেনদেন সম্ভব নয়।
তাই যেকোন ব্যক্তির সাথে মোবাইল ওয়ালেটের পিন নম্বর শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি খুব কাছের আপনজন বা পরিবারের সদস্যদের সাথে পিন নম্বর শেয়ার না করা ভালো।
অনেকে আবার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করা হয়েছে ভেবে প্রতারকের সাথে পিন নম্বর শেয়ার করেন। জেনে রাখুন পিন নম্বর জানেন কেবল গ্রাহক। যে প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করছেন তারাও আপনার পিন জানেন না বা কখনই জানতে চাইবেন না।
ফলে যখন-ই কেউ পিন নম্বর জানতে চাইবে বুঝতে হবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে পরিস্থিতি যা-ই হোক পিন নম্বর গোপন রাখুন।
# চাকরি পেয়েছেন, লটারি জিতেছেন, আপনার আত্মীয় বা পরিচিত কেউ বিপদে পড়েছেন তার সাহায্য দরকার, তথ্য আপডেট করা হচ্ছে, অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে, ভুল করে টাকা পাঠানো হয়েছে- এরকম বা এর বাইরে পিন নম্বর বা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে কেউ ফোন করলে বা এসএমএস এর মাধ্যমে কোনো তথ্য চাইলে আগে তার পরিচয় নিশ্চিত করুন। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে সেই নম্বর পরিচিত হলেও ভিন্ন উপায়ে পরিচয় নিশ্চিত করুন।
পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কোন ধরনের লেনদেন করবেন না।
# অনেক গ্রাহক হ্যান্ডসেটে মোবাইল অ্যাকাউন্টের নম্বর সংরক্ষণ করে রাখেন। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কারণে মোবাইল হারিয়ে গেলে মোবাইল অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে পরবে। সুতরাং পিন নম্বর, ইউজার আইডি মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখবেন না। সবসময় লেনদেন শেষে অ্যাকাউন্ট থেকে লগআউট করবেন।
# অনেক ক্ষেত্রে যেসব গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হন তাদেরকে ফোনে কথা বলতে বলতেই নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয় এখন ১ চাপুন, এখন অ্যামাউন্ট দিন, পিন নম্বর দিন। কখনোই ফোনের নির্দেশনা অনুসারে বাটনে প্রেস করবেন না। ফোনের নির্দেশনা অনুসরণ করিয়ে আপনাকে দিয়েই আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা প্রতারক তার অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিতে পারে।
# ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো বা অন্য কোনো মাধ্যমে খুব কাছের পরিচিত কেউ টাকা ধার চাইলে বা বিকাশ করতে বললে সাথে সাথে তা করবেন না। টাকা পাঠানোর আগে আসলেই তিনি টাকা ধার চেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
# কোনো অবস্থাতেই কাউকে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওর্য়াড) নম্বর শেয়ার করবেন না বা ওটিপি’র মেসেজ শেয়ার করবেন না।
Share!