রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সোমবার ভোর ৫টা ৭ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমকম্পন অনুভূত হয়। এসময় সারা দেশ বড় ধরনের ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠে। এতে মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে বেলা সাড়ে ১০টায় ৩.৬ মাত্রার আরেকটি ‘অাফটার শক’ অনুভূত হয়েছে। রাজধানীর জুরাইন, লালমনিরহাট ও রাজশাহীতে ভূমিকম্প আতংকে স্ট্রোক করে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- জুরাইনের আতিকুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী খলিলুর রহমান। লালমনিরহাটে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এ ছাড়া হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে এবং ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে অন্তত ২০ জনসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বারিধারার প্রগতি সরনিসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সাভারের বাইপালে তিতার গ্যাস লাইনেও ফাটল দেখা গেছে। সিলেটের নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল ধসে ৪ জন আহত হয়েছেন। এদিকে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দেশজুড়ে টহল দিচ্ছে দমকল বাহিনী।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। ঢাকা থেকে ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৫১ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে। এদিকে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, হিলি, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, খুলনা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, মৌলভীবাজার, পঞ্চগড়, কিশোরগঞ্জ, মেহেরপুর, নেত্রকোনা, বগুড়া, গাজীপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বান্দরবান জানান, ভুমিকম্পের সময় জেলা শহরের বসতঘর,পাকা দালানসহ স্থাপনাগুলোতে মাঝারি ঝাঁকুনী দেয়। ঘুমন্ত মানুষ ভুমিকম্পের ঝাঁকুনিতে জেগে উঠে। সকাল সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি ।
চুয়াডাঙ্গা জানান, প্রায় ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূ-কম্পনের সময় ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নড়ে ওঠে। এ ঘটনায় আতংকিত হয়ে ওঠে অনেকেই। কেউ কেউ ভয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। তবে জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
মেহেরপুর ভূমিকম্পের সময় মেহেরপুর শহরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ভূকম্পনের কারণে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। অনেকে কান্না কাটি শুরু করে। কেউ জোরে জোরে আল্লা আল্লা করে। মাত্র ৭ থেকে ১০ সেকেণ্ডের এই ভূ কম্পন স্থায়ী ছিল। তবে কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ বকশীগঞ্জ উপজেলায় মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প অনুভুতি হয়েছে। ৪ জানুয়ারি সোমবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে পর পর দু’বার এ ভূমিকম্প অনুভুতি হয়। প্রায় ২০ সেকেন্ড কম্পন অব্যাহত থাকে। ভোর রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠায় এলাকার মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। ওই সময় ঘরে ঘুম থেকে উঠা মানুষ আতংকিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির আঙ্গিনায়, অনেকে সড়কে নেমে আসে।
২০ সেকেন্ডে বেশী সময়ে স্থায়ী ভূমিকম্পে বকশীগঞ্জে কোন ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুরে ভু কম্পনের সময় পুলিশ লাইনের দুই পুলিশ সদস্য ভীত হয়ে ব্যারাকের তিনতলা থেকে লাফিয়ে পরে আহত হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ জানান,ভুমিকম্পের সময় পুলিশ ব্যরাকের তিনতলা ও দেতালা থেকে লাফিয়ে পরে নাহিদ খন্দকার ও সোহেল রানা নামের দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়।
আহতরা মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ জানান,ভুমিকম্পের সময় পুলিশ ব্যরাকের তিনতলা ও দেতালা থেকে লাফিয়ে পরে নাহিদ খন্দকার ও সোহেল রানা নামের দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়।
আহতরা মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
ভেড়ামারা শক্তিশালী ভূমিকম্পে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাও কেঁপে উঠে। ভোর ৫টা ৭ মিনিটের দিকে পরপর দুবার হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে সব কিছু। গভীর ঘুমে থাকা মানুষজন আতংকে জেগে উঠে ছুটাছুটি করতে থাকে। ৮০ বছরের বৃদ্ধ আসলাম উদ্দীন জানিয়েছেন, আমার জীবনে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখিনি। সব কিছুই খুব জোরে জোরে কাঁপতে থাকে। কাঁপার দুলানি থাকে প্রায় ২ মিনিট। ভোর বেলাতেও মানুষজন চরম আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পে বড় বড় এবং পুরাতন কয়েকটি বিল্ডিং এ ফাটল দেখা দেয়।
Share!