আপনার শিশু কি মোটা হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, অপর্যাপ্ত ঘুম এর জন্য অনেকাংশে দায়ী হতে পারে। কেবল শিশুদের বেলায় নয়, কিশোর বয়সের আগে ও পরেও এমনটি হতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর স্থূলতা ও অপর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণার ফল অনুযায়ী, শিশু-কিশোররা যারা পর্যাপ্ত ঘুমায় তাদের তুলনায় যারা কম ঘুমায় তারা বেশি মোটা।
চিকিৎসকরা বলেন, অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে কিশোর বয়সের আগে ও পরে স্থূলতা দেখা দেয়। এই স্থূলতা পুরো শরীরজুড়ে হয় না। কেবল পেটের এলাকাজুড়ে এই অবস্থা দেখা দেয় এবং যেসব বাচ্চার ভালো ঘুম হয় না তাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই স্বাভাবিক।
ঘুমের অভাবে কিভাবে স্থূলতা আসে?
ভালো ঘুম না হলে তিনটি উপায়ে স্থূলতা সৃষ্টি হয়।
১। ঘুমের অভাবে শিশুরা সারাদিন অলস সময় পার করে। তাদের মেজাজ থাকে খিটখিটে। এতে তাদের শারীরিক সক্রিয়তার অভাব দেখা দেয় যা স্থূলতার কারণ হয়।
২। অপর্যাপ্ত ঘুম শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যথেষ্ট ঘুম না হলে মানসিক সতর্কতা কাজ করে না। এতে তাদের জ্ঞানীয় আচরণ, উদাসীনতা প্রবণতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং খাবার গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে মোটা হয়ে যায় তারা।
৩। প্রত্যেক শিশুর ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) থাকতে হবে। এতে চোখের দ্রুত গতি, আরো স্বপ্নময় এবং শারীরিক আন্দোলন হয়। আর নন-আরইএম ঘুমে নাড়ির স্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বৃদ্ধি পায়। যে শিশুরা এর দুটোই যথেষ্ট পায় না, তারা ক্রন্দনশীল হতে থাকে। এতে তাদের বুকের দুধ কিংবা বোতলের দুধ আরো বেশি খাওয়ানো হয়। ফলে শৈশবেই বাড়ে তাদের স্থূলতা।
কেন বাচ্চাদের যথেষ্ট ঘুম হয় না?
চিকিৎসকদের মতে, ভালো ঘুমের জন্য আপনার সন্তানের শোবার ঘরের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো প্রথমেই সরাতে হবে। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত ঘুমের পেছনে বেশিরভাগই কাজ করে ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখা। এর অর্থ হলো শিশুটির শোবার ঘরে টেলিভিশন সেট এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস রয়েছে। অনেক জায়গায় ঘুমপাড়ানি গান বাজানো হয় মোবাইলে। এসব বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলো ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
দ্বিতীয়ত, অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করেন না। তাঁরা পেশাগত কারণে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন। ফলে সন্তানকে আগেভাগে ঘুমিয়ে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এটি সন্তানের জ্ঞানীয় আচরণে প্রভাব ফেলছে।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও শিশুর ঘুমের ঘাটতির বড় কারণ। বাড়তি একাডেমিক চাপ থাকার কারণে শিশুরা অন্যান্য কার্যক্রম থেকে খুব ছোট বয়স থেকেই সরিয়ে রাখে। তারা ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারে না।
আপনার সন্তান কতক্ষণ ঘুমাবে?
ঘুমের অভাবে যে স্থূলতা সৃষ্টি হয় তা শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদযন্ত্রের সমস্যার পর দেখা দেয় ডায়াবেটিস। ফলে শিশুরা যাতে প্রয়োজন মতো ঘুমাতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
চিকিৎসকরা বলেন, একজন নবজাতক দিনে ২০ ঘণ্টার মতো ঘুমাতে পারে। নবজাতক থেকে শিশুকালে উত্তীর্ণের পর শিশুর প্রতিদিন ১৫-১৬ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, যার মধ্যে তিন থেকে চার ঘণ্টা থাকবে একেবারে নির্ভেজাল ঘুম। এক বছর বয়স থেকে শিশুর প্রয়োজন অন্তত ১০-১২ ঘণ্টা ঘুম।
শিশুর বয়স যখন দুই বছর হবে, তখন বিকেলে অন্তত এক-দেড় ঘণ্টা ঘুমাবে আর রাতে ঘুমাবে আট থেকে ১০ ঘন্টা। যেহেতু বেশিরভাগ শিশুর স্কুলের জন্য ভোরে জেগে উঠতে হয়, তাই তাদের সন্ধ্যা রাতেই ঘুমাতে যাওয়া ভালো। এতে তারা সবচেয়ে ভালো আরইএম এবং নন-আরইএম ঘুম পাবে।