Friday , 1 November 2024
সংবাদ শিরোনাম

প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে

প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পৌর নির্বাচনে আজ সোমবার মধ্যরাত থেকেই শেষ হচ্ছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় জনপ্রতিনিধি নির্ধারণে ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন ভোটাররা। আর একদিন পর বুধবার এসব পৌরসভায় একযোগে ভোট হবে। এ উপলক্ষে ওই দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাত বছর পর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্তত ১৯টি রাজনৈতিক দল নিজস্ব প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। মেয়র পদে ৯৪৫ জনসহ মোট ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ সকাল থেকে মাঠে নামছেন পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের লক্ষাধিক সদস্য। তারা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় টহল দেবেন। এছাড়াও মাঠে থাকছেন ১ হাজার ২০৪ জন নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া আজ মধ্যরাতের মধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।ইসি কর্মকর্তারা জানান, অধিকাংশ রিটার্নিং কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বিজিবি মোতায়েনের চাহিদাপত্র দেন। চাহিদা অনুযায়ী ২২৯ পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ছয় উপকূলীয় পৌরসভা- মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, রামগতি ও পাথরঘাটায় কোস্টগার্ড থাকবে। ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে বিজিবি সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।কমিশন জানায়, নির্বাচন উপলক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পৌরসভায় বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বিজিবি-র‌্যাব-কোস্টগার্ড ও পুলিশ। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেয়া, ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা প্রতিরোধে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের ব্যালট পেপার, সিল, ফরম প্যাকেট ও অন্যান্য নির্বাচন সামগ্রী নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছেছে।শেষ হচ্ছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা : ৯ ডিসেম্বর থেকে পৌর এলাকাগুলোতে শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা। ১৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতীক নিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন প্রার্থীরা। হামলা-মারধরের অভিযোগের মধ্যেও পৌরসভাগুলোতে বেশ জমজমাট প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা সেখানে যোগ দেয়া এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে বা সেখানে যোগ দিতে পারবে না। কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করলে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

 নিরাপত্তার চাদরে পৌর এলাকা : নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে লক্ষাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই মাঠে নামছেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে ভোটের দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন যত প্রার্থী : ইসির তথ্য মতে, ২৩৫ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৫৮৯ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৫৩৩ জন প্রার্থী রয়েছে। তবে এদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র পদে ৬ এবং কাউন্সিলর পদে ৯৪ ও নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।ভোটার ও ভোট কেন্দ্র : ইসি জানায়, নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৮২টি ভোট কেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোট কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ১৯ হাজার ১৮৭টি। প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৮২ জন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ১৯ হাজার ১৮৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৩৮ হাজার ৩৭৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন। ভোটগ্রহণ করবেন ৬১ হাজার ১৪৩ জন কর্মকর্তা।উত্তর বঙ্গে বিশেষ সতর্কতা : এদিকে ভোটে জঙ্গি হামলার আশংকায় আগেভাগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃংখলা রক্ষার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বিষয়টি বিবেচনা, বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন সমাবেশ, পথসভা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আইনশৃংখলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি তৎপরতা রোধে আইনশৃংখলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও তৎপর হতে হবে। সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট প্রদান ও নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে বহিরাগতদের সমাগম বন্ধে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।কেন্দ্র দখলের বিষয়ে সিইসির সতর্কতা : ভোটের আগের রাতে আগের মতো যাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। আইনশৃংখলা বৈঠকে তিনি বলেন, অতীতে ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অনাকাক্সিক্ষত। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এবার যাতে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন তিনি।বহিরাগতদের অবস্থান ও বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ : সোমবার রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি পরিপত্রে। এছাড়া ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী আরও চার দিন পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।৪৮ ঘণ্টা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইতিমধ্যে এ নির্দেশনা জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এসব পৌরসভায় বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় সোমবার রাত ১২টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top