মেঘনাপারের জনপদ লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধকে ঘিরে পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রামগতি উপজেলার নদী আর নির্মল প্রকৃতি—দুইয়ে মিলে এ উপকূলকে করে তুলেছে যেন অপরূপ। উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ছোট ছোট নৌকায় জেলেদের ইলিশ ধরা, জোয়ার-ভাটার টানে উঁচু ঢেউ আঁচড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের গায়ে এমন নানা দৃশ্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। এখানে নদীর ঢেউ-জলের মিষ্টি সুর, জেগে ওঠা চর, নৌবিহার, ঢেউ-বেলাভূমির মিতালীর সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন আসে হাজারো মানুষ।
জেলা শহর থেকে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা থাকায় ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়িবাঁধের আলেকজান্ডারের এক কিলোমিটার অংশে নানা বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পরিকল্পিতভাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে এটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে এ স্থানকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে যাওয়ার পর সম্প্রতি এর উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ আল মামুনও এটি ‘পর্যটনকেন্দ্র’ হবে বলে আশাবাদী। তাঁর ভাষ্যমতে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল ওই স্থানটি পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শাহজাহান কামাল লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য।
সরেজমিন দেখা গেছে, রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ইলিশের অভয়াশ্রম। শুধু লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৬২ হাজার জেলে এ নদীনির্ভর জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধসংলগ্ন নদীতে পণ্যবাহী সারি সারি লাইটারেজ জাহাজ ও মাছ শিকারে অসংখ্য নৌকার ছুটাছুটি যেন নজর কাড়ে। তীরে রয়েছে নারিকেল-সুপারিসহ বিভিন্ন বৃক্ষের সাজানো বাগান। এ ছাড়া চরে দৃষ্টি কাড়ে গরু-মহিষ, ভেড়া আর রাখালের বন্ধুত্ব। সয়াবিন ও ধানসহ ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। এ যেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি। স্নিগ্ধতায় মন ছুঁয়ে যায়। এতে এখানে পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল সামাদ বলেন, আলেকজান্ডারে প্রতিদিন হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশুদের অপূর্ব মিলনমেলা ঘটে। এ এলাকায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়। এ নিয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর আলী বলেন, এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশনে চিঠি দেওয়ার পর একটি প্রতিনিধিদল মে মাসে পরিদর্শন করে গেছে। তারা পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার পরিবেশ পেয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন গেস্টহাউস ও টয়লেটসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সম্প্রতি ছাতা স্থাপন ও টয়লেট নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকার বরাদ্দ হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধকে ঘিরে পর্যটনে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় করে। এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল ওই স্থানটি পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।