বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে আপনার এত সম্পর্ক গভীর হল কীভাবে? বিশেষ করে বাঙালি মেয়ে কাজলকে সঙ্গে নিয়ে আজ কী এক্সট্রা কিছু বলবেন?
মনে রাখবেন বাঙালি আমাকে খুব ভালোবাসেন। বাঙালির অনেক খাবার খুব ভালো লাগে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে মাছ ভাজা। আর আমিও সব সময় বাঙালিদের কাছ থেকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু চাইনি, চাই-ও না।
কাজলের সঙ্গে আপনার অভিনয় সেই ‘বাজিগর’ থেকে শুরু। আজকের ‘দিলওয়ালে’-তে পৌঁছে কোনো নতুন উপলব্ধি হচ্ছে?
হচ্ছে তো! গত কুড়ি বছরে বেশ কিছু ছবি করেছি কাজলের সঙ্গে। সব ছবি একটার থেকে আরেকটায় গিয়ে আলাদা। নতুন ইস্যু এসেছে। লাভ স্টোরি হলেও নতুন দৃষ্টিকোণ এসেছে। আমরা অন্যরকম বিহেভ করেছি। নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তায় নিজেদের এক্সপ্রেস করে গিয়েছি। এই যেমন এখনাকার ছবি ‘দিলওয়ালে’, এটাও এতদিন করে আসা আমার আর কাজলের আগের ছবিগুলো থেকে আলাদা। এখানে চরিত্রের ভেতর অন্যরকম ডার্কনেস রয়েছে। আমার হাতে পিস্তল, কাজলের হাতেও পিস্তল…দর্শক ভাবছেন এটা আবার কেমন ইক্যুয়েশন? এটাই নতুন। এটাই লাভ স্টোরিকে অন্যভাবে দেখা।
যে কোনো নতুন ছবি রিলিজের আগে এক ধরনের নতুন মার্কেটিং স্ট্যাটেজি দেখা যায়। এবার কি নতুন কিছু?
আমার তো মনে হয় না ব্যাপারটায় আমি খুব ব্যতিক্রমী কিছু করি বলে। নরমালি এটা এখন একটা সিস্টেমে দাঁড়িয়ে গেছে। হয় ৩০ সেকেন্ড, না হয় ৫০ সেকেন্ড অথবা দু-আড়াই মিনিটের ট্রেলর আসে। যাতে কিছু সিকোয়েন্স থাকে, গান থাকে, ছবিটা সম্পর্কে একটা ওভার পাওয়ার আইডিয়া দেয়ার জন্য। ছবি রিলিজের একমাস আগে থেকে এক-এক সপ্তাহ অন্তর এক-একটা গানের সিকোয়েন্স রিলিজ করা হয়। তাতে নতুন ছবি সম্পর্কে দর্শকদের মনে কৌতূহল তৈরি হয়। কোথাও লাইভ পারফরম্যান্সও করতে হয়। সব মিলিয়ে এটা একটা প্রসেস। গল্পটা না বলে দিয়ে, ছবির হাইলাইটগুলো না দেখিয়ে একটা বেসিক ওভার পাওয়ার আইডিয়া মানুষকে দেয়া। এবার এই তো কলকতায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠানে এলাম। সবাই খুব ভালোবাসছে, কাছে ডাকছে।
দেখলাম আপনি কাজলকে নিজের টেম্পারেচার দেখাচ্ছিলেন, সত্যিই কী আপনি অসুস্থ?
এজন্যই তো দেরি হল আসতে। শরীরটা ঠিক নেই। এত ভোরে উঠে পরপর শুটিং করেছি, সর্দিজ্বর হয়ে গেছে। আমাদের ইউনিটের বেশ কয়েকজনের এই অবস্থা। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আমারই। কাজল বেশ টাফ। তেমন কিছু হয়নি। পরিচালক রোহিত শেঠিও টাফ। ও সামলে নিয়েছে। ‘দিলওয়ালে’-র অড আওয়ার শুটিংয়ে বারবার শরীর খারাপ হয়েছে। তবে এখন আমরা সবাই সুস্থ। আসলে মানুষের ভালোবাসায় সুস্থ হয়েছি।
‘দিলওয়ালে’-র প্রচারের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে আপনি আর কাজল মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির সিনেমা হলে গিয়েছিলেন। সামনা-সামনি প্রশ্নোত্তর আসরে বলেছিলেন। কেমন সেই অভিজ্ঞতা?
অসম্ভব নস্টালেজিক লাগছিল। কাজলেরও তাই। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে রিলিজ হওয়া একটা ছবিকে একই প্রেক্ষাগৃহে টানা দেখিয়ে যাওয়া তো রেকর্ড। মারাঠা মন্দির সিনেমা হলে যেভাবে ২০ বছর ধরে একটা সিনেমা দেখানো হচ্ছে তা তো গোটা বিশ্বে রেকর্ড। আসলে আমার মনে হয় ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’-কে মানুষ নিজেদের গুণে আপন করে নিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই ছবির পরিচালক, কলাকুশলী, আমরা কেউ বোধহয় এই সাফল্যের অংশীদার নই। এই সাফল্যের অংশীদার দর্শক। তারাই নিজেদের ভালোবাসায় ছবিটাকে ইতিহাসের পাতায় এনে ফেলেছেন। অসাধারণ অভিজ্ঞতা, মাশাল্লাহ।একদিকে পেশাগত জীবন আর একদিকে পারিবারিক জীবনকে কীভাবে ব্যালেন্স করেন আপনি?কোনো একটাকে বাদ দিয়ে তো আরেকটা নয়। শুধু দিনকে নিয়েই তো ২৪ ঘণ্টা নয়। (হাসি) রাতকেও দরকার। সবদিক সামলে দিয়ে চলতে পারাই তো জীবন। আমিও সেভাবেই চলি। আর সময় নেই। আজকেই বিকালের ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালুরু। ওখান থেকে পরের দিন দুবাই। যেখানে আগেই বরুণ ধাওয়ান আর কৃতীকে (কৃতী স্যানন) পাঠিয়ে দিয়েছি। আমরাও যোগ দেব এবার। এভাবেই চলছে। পকেটে জ্বর কমানোর ওষুধ নিয়ে।
(হেসে উত্তর দিলেন) হতে পারে। কেন হওয়া যাবে না? তবে তার জন্য প্রচুর আত্মত্যাগের দরকার। আমার মনে হয় মানুষ যত বড় হতে থাকে, তত জীবনের নানারকম চাহিদা তাকে গ্রাস করতে থাকে। তাই বড় হতে থাকা মানুষ নিজের জীবনের সবরকম চাহিদা মিটিয়ে নিঃশর্ত, আত্মত্যাগ সর্বস্ব প্রেমে ডুবে থাকতে পারে না। বাস্তবের বেশকিছু চাহিদা তাকে বারবার অন্য পথে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। টানাপোড়েন তৈরি হয়। সিনেমায় তো এগুলোও দেখানো হয় না? ছেলেদের মধ্যে একরকম নির্ভেজাল, নিঃশর্ত ভালোবাসা পাবেন। আর পোষা প্রাণীদের মধ্যে পাবেন। তবে আত্মত্যাগ করা মানুষ কমে গেলেও এখনও আছেন। অন্তত ইডিওলজিক্যালি তো আছেনই। তা না হলে তারা শাহরুখ-কাজলের প্রেমে দেখতে কেন থিয়েটারে আসেন।
রিলেশনশিপ নিয়ে কোথায় কী লেখা হয়েছে জানি না। কিন্তু আমরা দু’জন দু’জনকে চিনি অনেক বছর ধরে। এবারের প্রমোশনে আমরা কাজ করেছি কম। কথাই বলেছি বেশি। ও আবার ইমোশনকে বেশি ড্রামাট্রিক কিংবা মেলোড্রামাটিক করা পছন্দ করে না।আপনি যে একটু আগেই বলছিলেন ‘ফোর্বস’ পত্রিকার প্রচ্ছদে ছবি ছাপা হওয়া মানেই সে বড়লোক হয়ে যায় না, এটা কি আপনার বিনয় নয়?না, বিনয় নয়। সত্যি কথা। আপনাকে একটা উদাহরণ দিই তা হলে? একটা সিনেমা তৈরিতে একজন পরিচালক, সম্পাদক, সিনেম্যাটোগ্রাফার, কোরিওগ্রাফারদের কি কম অবদান? কী নিদারুণ পরিশ্রম করেন এরা। আর আমি নায়ক হিসেবে শুধু মুখ দেখিয়ে, কোরিওগ্রাফারের দেখানো স্টেপ্স দিয়ে, ডায়ালগ, স্ক্রিপ্টরাইটারদের লিখে দেয়া ডায়ালগ বলে দর্শকদের সামনে হিরো হয়ে যাই। অ্যাকশন ডিরেক্টরের দেখিয়ে দেয়া অ্যাকশন করি। সিনেম্যাটোগ্রাফারের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে নেয়া শর্ট টেকিংয়ে হিরো হয়ে যাই। নাম হয়ে যায়। ‘ফোর্বস’-এর মতো পত্রিকার প্রচ্ছদে ছবি ছাপা হয়। একটা লম্বা-চওড়া ইন্টারভিউ দিয়ে দিই। যদিও সেটা আমার টিমকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে। তবু একথা ঠিক, এরকম ধরনের ম্যাগাজিনের কভারে ছবি ছাপা হলে ভালোই লাগে। খুশি হই। মনে হয়, যে বিজনেস আমি করছি, তার একটা স্বীকৃতি পাচ্ছি। খারাপ কী?