‘‘ অবশ্যই আমাদের হতে হবে সুশিক্ষিত ও মানবিক ’’
চাওয়ার যেমন শেষ নেই, পাওয়ার তেমন আশা নেই
কাকে বলি কোথায় যাই , ভেবে কিছু নাহি পাই ।
হারিয়ে গেলো মানবতা , আসবেনা আর কিরে ?
আমরা সবাই যাচ্ছি কোথায় , তাকিয়ে দোখো ফিরে ।
চাওয়া-পাওয়া ও আশা যাওয়ার এই সন্ধিক্ষণে গত ৮ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার এর নির্মম হত্যা কান্ডের রায় প্রকাশ হয় । রায়ে ২০ জনের ফাঁসি ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ হয় । ২০১৯ সালে ৬ই অক্টোবর বুয়েটের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আবরারকে তথাকথিত রাজেনৈতিক অঙ্গনের বড় ভাইয়েরা পিটিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে । আবরার ফাহাদের লাশ যখন উদ্ধার করা হয় । তখন আবরারের পিতা হত্যা কারিদের শাস্তি ও বিচার চান । আর আবরার হত্যার নিষ্ঠুর ও বরবর কাহিনী যখন প্রকাশ হয় , তখন প্রতিটি হৃদয়বান মানুষের-ই হৃদয়ে কম বেশী ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে এবং কামনা করেছে মানবতা বর্জিত এই অমানুষ গুলোর যেন উপযুক্ত শাস্তি হয় । তবে অনেকেরই সন্দেহ ছিল এদের শাস্তি বা বিচার নিয়ে , কারন অপরাধীরা ছিলো আওয়ামী অংগ সংগঠন , ছাত্র লীগের । কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রী যে সবার নেত্রী ,দেশের নেত্রী এবং তিনি যে সন্ত্রাস পছন্দ করেন না , তার প্রমাণ ছাত্রলীগ হওয়া সত্যেও আবরার হত্যার সকল আসামীকে অতি দ্রুত ধরার ও বিচারের আদেশ দেন প্রধানমন্ত্রী । সে কারনেই অতি অল্প কয়েক দিনের মধ্যে দেশেল বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫ জন আসামীর মধ্যে ০৩ জনের সন্ধান না পেলেও ২২ জনকে পুলিশ ধরে আনে এবং তাদের বিচার শেষে ৫ জনের যাবজ্জীবন ও ২০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন ঢাকার ০১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক এবং এই আসামীদের ডেথ রেফারেন্স নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন গত ০৬ই জানুয়ারী বৃহঃবার সুপ্রিম কোর্ট সুত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেন। নিম্ন আদালত ফাসিঁর আদেশ দিলেও উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিলে পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে আমাদের সবাইকে, আর সে ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজর দারীর ও প্রয়োজন হতে পারে। যায় হেক সময়ের টা সময়ই বলে দিবে। তবে একটা বিষয় লক্ষনীয় তা হলো আদালতের রায় ঘোষনা কালে উপস্থিত ২২ জন আসামীই ছিল নির্বিকার , তারা কোন ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখাইনি, অর্থ্যাৎ তারা তাদের অপরাধের শাস্তি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
আবরার হত্যার পর আবরারের বাবা-মা এর হৃদয়ের যেমন হাহাকার ও শূন্যতা বিরাজ করছে। হৃদয় ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েছে। আজ এই ২২ জন আসামীর বাবা-মা এর হৃদয়ে কি কম ঝড় বইছে, তাদের হৃদয়ে কি রক্তক্ষরণ হচ্ছে না? সারা দুনিয়ার মানুষ তাদের ফাঁসি চাইলেও, বাবা-মা কি তার সন্তানের ফাঁসি মেনে নিতে পারছে। তারা কি জানতো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটে এসে তাদের সন্তানেরা এই রকম খুনি সন্ত্রাসী অমানুষ হবে। ফাঁসির রশিতে মরতে হবে। তারাতো তাদের সন্তানকে পাঠিয়েছিল মানুষের মত মানুষ বানাতে। বড় মানুষ হিসাবে গড়তে।
আজ যদি খুনিদের বাবা-মা প্রশ্ন করেন কেন আমার সন্তান খুনি, সন্ত্রাসী হলো? কে বানালো তাকে সন্ত্রাসী খুনি। এর জবাব কে দিবে? একজন রিক্সাওয়ালা কিংবা একজন চা-এর দোকানদার সহজেই বলে দিবে, রাজনীতিই এর জন্য দায়ী। আমাদের মত কিছু লোক বলবে অপরাজনীতি। আর রাজনীতির যারা ধারক বাহক দেশের যারা নিয়ন্ত্রন কর্তা তারা এর উত্তর দিবে কিভাবে দিবে আমার জানা নাই। তবে উত্তরের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকা দরকার।
সেদিন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শিক্ষার্থী আবরারের বাবা হৃদয়ক্ষত কন্ঠে বুক ভাসিয়ে বলেছিলেন এ রকম হত্যাকান্ড যেন না ঘটে। কোন বাবা মা এর বুক যেন এভাবে আর খালি না হয়। সে দিন আবরার এর বাবার ব্যাথায় ব্যাথিত হয়ে সমগ্র দেশবাসী সমবেদনা ও সহানুভূতি জানিয়েছে। হত্যাকারীদের শাস্তি বা ফাঁসির কামনা করছে। কিন্তু আজ এতগুলো মৃত্যুর জন্য কেউ-ই সহানুভূতি বা মানবতা দেখাচ্ছেনা, কারন ওরা খুনি,সন্ত্রাসী। মানবতা ও মানবাধিকার ওদের কাছে মৃত। ওরা খুন করেছে আবরারকে, হত্যা করেছ মানবাধিকার মানবতাকে। ওদের কাছে মানবাধিকার বা মানবতা বেচে থাকলে আবরার ও বেচে থাকতো। আবরার বেঁচে থাকলে ওরাও আজ ভালো থাকতো, বেঁচে থাকার অধিকার থাকতো। একদিন হয়তো ওদের ফাঁসি হবে, হবে মৃত্যু, দেশবাসী খুশি হবে। খুশি হবে আবরার এর বাবা- মা । দেশবাসী পাবে ন্যায় বিচার আর আবরারের বাবা-মা পাবে একটু সান্তনা । কিন্তু ওদের বাবা-মা পাবে হাজারো যন্ত্রনা । কে বুঝবে তাদের হৃদয়ের জ্বালা?
হয়তো ওরা বাঁচবেনা কিন্তু ওদের মৃত্যুুর আদেশ আমাদের বুঝিয়ে দিল। শুধু শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত ও মানবিক হতে হবে আমাদের । আর পাপ কাওকেই ছেড়ে দেয় না। পাপের বোঝা ভারি হলে কেউ রক্ষা পায় না, মানবতার মৃত্যু হলে আমাদেরও পতন অনিবার্য হয়ে পরে । তাই আমরা যারা বেঁচে থাকবো তারা কি পারবোনা সন্ত্রাস অপরাজনীতি ত্যাগ করে মানবতাকে রক্ষা করতে। আগামী কালের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ গড়তে।
সাংবাদিক মোঃ মহিদুল ইসলাম ভূইয়া
সহকারী সচিব:- বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন
সদস্য:- ওয়ার্ল্ড জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল।