প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। বিশশান্তি ও সংহতি স্থাপনে তার দর্শন ও অর্জন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে স্থান-কাল নির্বিশেষে বিশ্বের সব কূটনীতিক ও শান্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। যা বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতেও প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ফরেন সার্ভিস একাডেমির এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি মনে করেন, ভালো কূটনীতিক হতে হলে দেশপ্রেমকে গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তনশীল বিশ্ব-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের স্বার্থসংরক্ষণের বিষয়ে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমাদের কূটনীতির একটি বড় অংশই হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি। তাছাড়া বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনসম্পদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কূটনীতিকরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তারা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি এমডিজি, এসডিজি, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো বিশেষ দেশ বা জোটের দিকে না ঝুঁকে বিশ্বের সব শান্তিকামী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে নিরলস কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের আমলে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভারসাম্যের কূটনীতি পরিচালনা করছি। জাতির পিতার আদর্শে শান্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীসহ সব বহুপাক্ষিক ফোরামে আমরা কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করছি। এ মাসেই ঢাকায় বিশ্বের শান্তিকামী বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নেতাদের অংশগ্রহণে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন’ সফলভাবে আয়োজন করেছে। সেখানে আমরা সুদূরপ্রসারী ‘ঢাকা ঘোষণা’ গ্রহণ করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য দাবির সঙ্গে সবসময় একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা যখন হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, আমরা তাদের দিকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা মিয়ানমারকে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার এবং আঞ্চলিক শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান সবারই কাম্য।
এসময় পদকজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দু’জন কূটনীতিক আজকের পদক বিজয়ী তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসাধারণ কূটনৈতিক নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল মেহরি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের দু’দেশ এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাছাড়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম (অব.) দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সরকারের আমলে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের অভিযাত্রায় তিনি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রতি বছর এই পদক দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের কূটনীতিকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অনুপ্রাণিত হবেন। পাশাপাশি আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কূটনীতিকরাও তাদের নিজ নিজ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন শিখড়ে উন্নীত করতে উৎসাহিত হবেন।