ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাতক্ষীরয় বিরামহীন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড় বৃষ্টির খবরে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, বড় ধরনের আঘাতের কোনো শঙ্কা নেই। ফলে নিরাপদে থাকবে উপকূলীয় অঞ্চল।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এএ অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সাতক্ষীরার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি এবং বাঁধ ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটবে উপকূলবাসীর।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নুরে আলম জানান, দুপুরের জোয়ারে কপোতাক্ষ নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি পানি ছিল। বর্তমানে অমাবস্যার গোন চলছে। জোয়ারের পানি বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
শনিবার সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ বৃষ্টিতে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। তবে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে জোয়ারে পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে উকূলবাসী।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি এলাকার জেলে ছামছুর রহমান জানান, গত দুই মাসের মধ্যে শুক্রবার থেকে খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ রবিবার রাতের জোয়ারে আরো বেশি পানি উঠতে পারে। এলাকার দুর্গাবাটি, দাতিনাখালী, চুনা বেশির ভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধগুলো দুর্বল। পানি বাড়লে এসব এলাকার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার চাঁদনিমুখা গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা সংকেত না বাড়ায় এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। লেবুবুনিয়া, পাশ্বেমারি, সোরা, দৃষ্টিনন্দন, পাতাখালী এলাকায় কয়েক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ রয়েছে। জোয়ারে পানির চাপ বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও এত কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে অতিবৃষ্টির কারণে ফসল ও ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয় কি না সে বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে এলাকার মানুষ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে জোয়ারে যে পরিমাণ পানি বাড়ছে তাতে এসব বেড়িবাঁধে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এরপরও সব এলাকায় খোঁজ রাখা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম থাকায় এখনো বাড়তি কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত থাকতে বলেছে। সাইক্লোন শেল্টার, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং ও উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে। সতর্ক সংকেত বাড়লে উপজেলায় জরুরি সভা করা হবে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। সেই সাথে ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে। দুপুরের পর আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাওয়াদের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল নিরাপদ থাকবে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। জেলেদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।