Friday , 1 November 2024
সংবাদ শিরোনাম

‘দেশ থেকে পালানোর পরিকল্পনা ছিল মেয়র আব্বাসের’

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী গ্রেফতার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। সেই উদ্দেশ্যে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্বাস আলীর ভাইরাল হওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অডিও রেকর্ডটি তার বলে স্বীকার করেছেন।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকালে মেয়র আব্বাস আলীকে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেল থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। পরে সেখানে র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী গেটে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মেয়র পদ হারানোর পর আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তিনি ধরা পড়ছিলেন না।

র‍্যাবের গোয়েন্দা দল তাকে ধরতে কাজ করে যাচ্ছিল উল্লেখ করে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আব্বাস আলী রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলে ওঠেন। খবর পেয়ে র‍্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল তাকে নজরদারিতে রাখে। এরপর বুধবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আব্বাস আলী প্রাথমিকভাবে ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি তার বলে স্বীকার করেছেন। তবে ঠিক কি উদ্দেশ্যে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং কারো মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে এমনটি করেছেন কি-না তা এখনো জানা যায়নি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

আব্বাস আলী ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবার কাটাখালীর মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।

ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ২৪ নভেম্বর দলীয় পদ থেকে মেয়র আব্বাসকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। ২৬ নভেম্বর তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গত ২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথা বলতে শোনা গেছে মেয়র আব্বাস আলীকে।

অডিও ক্লিপে আব্বাস আলী বলেন, ‘হাইওয়েটাকে আমরা ডিজাইন করতে দিয়েছি। আমাদের যে অংশটা হাইওয়ে। সিটি গেট থেকে আমার অংশ। টোটালই একটা ফার্মকে দিয়েছি যে, তারা একদম বিদেশি স্টাইলে সাজায়ে দিবে ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা।’

কথার এই পর্যায়ে পাশে থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন, ‘দুই পারে দুইটা গেট করার কথা আছে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক সঠিক না। এজন্য আমি ওকে থুব না। সব করব, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাছি, আমাকে যেভাবে বুঝ্যালো আমি দেখতে পাছি যে ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না আমাক বুঝাই দিছে।’

আব্বাস আলী বলেন, ‘যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এজন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া জায়গা নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি শিওর। তবে করলে কিছু করার নাই। মানুষেক সন্তুষ্ট করতে যাইয়া আল্লাক অসন্তুষ্ট করা যাবে না তো।’

বিষয়টি নিয়ে ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে বিবৃতি দেন আব্বাস আলী। তাতে ভাইরাল হওয়া অডিও প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘অডিওটি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনারা বুঝতে পারবেন অডিওটি এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। আমি কখনও কারও সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে না কিংবা কেউ ম্যুরাল নির্মাণ করলে বাধা দেওয়া হবে এ রকম কথা বলিনি।’

সেই সময় তিনি দাবি করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকে একটি অশুভ শক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ যেন গেট নির্মাণ করতে না পারি এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২৫ নভেম্বর অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এই মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top